নয়া দিল্লি: তিন মাস পার হয়ে গিয়েছে, তবুও যুদ্ধ থামেনি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া আরও আক্রমণাত্বক রূপ ধারণ করেছে, লাগাতার হামলা চলছে ইউক্রেনের উপরে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলেও, এর প্রভাব টের পাচ্ছে গোটা বিশ্বই। ইতিমধ্যেই যুদ্ধের জেরে জ্বালানি, খাদ্য ও সারের উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এর জেরে যেকোনও মুহূর্তেই বিশ্বজুড়ে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির উপরও বিশেষ প্রভাব ফেলতো পারে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। বৃহস্পতিবার এমনটাই উদ্বেগ প্রকাশ করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
মোদী সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানেই যোগ দিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে ফের একবার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “ইউক্রেনের কঠিন পরিস্থিতির প্রভাব আর কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যাবে। তিনটি সঙ্কট, যাকে আমরা ৩ এফ ক্রাইসিস বলছি, অর্থাৎ জ্বালানি, খাদ্য ও সারের সঙ্কট দেখা দেবে। ইতিমধ্যেই এই তিনটি পণ্যেরই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি, খাদ্যশস্য ও সার, এই তিনটি জিনিসেরই মুদ্রাস্ফীতির উপরে লক্ষণীয় প্রভাব রয়েছে।”
বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, “যদি খাবারের কথা বলি, তবে বলতেই হচ্ছে যে আগামিদিনে বিশ্বে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সারের ক্ষেত্রেও দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমদানিতে প্রভাব পড়বে এবং আগামী চাষের মরশুমে তার প্রভাব টের পাওয়া যাবে। বিগত দুই বছরে আমাদের দেশ বড় বড় চারটি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। করোনা সংক্রমণ, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের সঙ্গে টানাপোড়েন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। প্রতিটি সঙ্কটেরই প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উপরে।”
চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েও মুখ খোলেন বিদেশমন্ত্রী। চিনকে কড়া বার্তা দিতেই তিনি বলেন, “আমরা আরও একবার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার অবস্থান কোনওভাবেই বদলাতে দেব না আমরা। ১৯৬২ সালের পর এ বারই এত সংখ্যক সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সীমান্তে। ওই অঞ্চলে পরিকাঠামোগত উন্নতির কারণেই আমাদের সেনা পরপর দুটি শীতকাল সীমান্তে অতন্দ্র পাহারা দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে।”
বিগত আট বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও অনেকটাই স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হয়েছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির কারণে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কও আরও মজবুত হয়েছে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের নয়া পথ খুলে গিয়েছে বলেও দাবি করেন বিদেশমন্ত্রী।