নয়া দিল্লি: বিতর্কের জের। এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডকুমেন্টারি নিয়ে টুইট এবং ইউটিউবের লিঙ্ক ব্লক করল কেন্দ্র। ‘ইন্ডিয়া:দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ নামক BBC-র তৈরি তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব ব্লক করার নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। এব্যাপারে দেশের বিশিষ্ট তিন শতাধিক নাগরিকের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠিও দিয়েছে কেন্দ্র। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের প্রতিক্রিয়ার একদিন পরই এই পদক্ষেপ করল কেন্দ্র।
কী বলেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তৈরি BBC-র তথ্যচিত্র প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক বলেন, “ব্রিটিশ সরকার ইতিমধ্যেই এই তথ্যচিত্র এবং গুজরাট হিংসা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আমরা কোনও হিংসাকে সমর্থন করি না। কিন্তু, যেভাবে একজন মানুষের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমি একমত নাও হতে পারি।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই কড়া পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। BBC-র তথ্যচিত্রটির লিঙ্ক তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। ব্রিটেনের জাতীয় সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে যে ৫০টির বেশি টুইট করা হয়েছে, সেগুলি মুছে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে তথ্যচিত্রের সমালোচনা করে দেশের বিশিষ্ট ৩০২ নাগরিকের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠিও BBC-র বিরুদ্ধে টুইটার কর্তৃপক্ষকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। ৩০২ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ৩৩ জন রাষ্ট্রদূত সহ ১৩৩ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা এবং ১৫৬ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক।
কেন্দ্রের এই নাগরিকদের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি ও নির্দেশিকার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডকুমেন্টারি নিয়ে টুইটগুলি মুছতে শুরু করেছে টুইটার। যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন সহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদেরও টুইট মুছে ফেলা হয়েছে। জনগণের মতামত ও তাদের জ্ঞাতসারেই টুইটগুলি মুছে ফেলা হয়েছে বলে টুইটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। যদিও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
টুইট মুছে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন অভিযোগের সুরে বলেন, “সেন্সরশিপ। BBC-র তথ্যচিত্র নিয়ে আমার টুইট তুলে দিয়েছে টুইটার। যদিও সেটির লক্ষাধিক ভিউয়ার্স হয়েছিল।”
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা BBC-র তৈরি ‘ইন্ডিয়া:দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ নামক তথ্যচিত্রটি প্রকাশ পায়। এই তথ্যচিত্রের দুটি অংশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় আসার যাত্রাপথ সহ ২০০২ সালের গুজরাট হিংসার ঘটনা তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে। গুজরাট হিংসায় ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কড়া সমালোচনা করা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে। টুইটার ও ইউটিউবে তথ্যচিত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পরই তীব্র সমালোচনায় ভরে যায় টুইটার ও ইউটিউবের কমেন্ট বক্স। এরপরই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক তথ্য প্রযুক্তির ২০২১-এর নিয়মের অধীনে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে টুইটার এবং ইউটিউব-কে তথ্যচিত্রের লিঙ্ক তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। টুইটার কর্তৃপক্ষও সেই নির্দেশ মেনে নিয়েছে এবং জনগণও এব্যাপারে জ্ঞাত বলে জানিয়েছে।