নয়া দিল্লি: প্রতি মুহূর্তে চমকদার, চটকদার ভিডিয়ো চাই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের। নাহলেই ফলোয়ারের সংখ্যা ঝপ করে কমে যেতে পারে। আর এই চটকদার ভিডিয়ো কনটেন্ট তৈরির প্রতিযোগিতার চাপে, যে তাঁরা কতদূর যেতে পারেন, তারই প্রমাণ মিলল সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক ভিডিয়োয়। ভিডিয়োটি ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার ববি কাটারিয়ার। ভিডিয়োতে তাকে দেখা যাচ্ছে , স্পাইসজেট সংস্থার একটি বিমানের ভিতরেই ধূমপান করতে। এর জেরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে একটি মামলা দায়ের করেছে।
ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার বলবিন্দর কাটারিয়া ওরফে ববি কাটারিয়া গুরগাঁওয়ের বাসিন্দা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর ৬ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। তাঁরই একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তাকে দেখা যাচ্ছে বিমানের আসনে শুয়ে থাকতে। তাঁর হাতে ছিল একটি সিগারেট। এরপর একটি লাইটার দিয়ে তাঁকে সিগারেটটি জ্বালাতে দেখা যায়। রাজার হালে তিনি ওই জ্বলন্ত সিগারেটে বেশ কয়েকটি টান মারেন। এখানেই ওই ১২ সেকেন্ডের ভিডিয়ো ক্লিপটি শেষ হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিয়োটি নেটিজেনরা কেউই ভালভাবে নেননি। অনেকেই অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে ভিডিয়োটিতে ট্যাগ করেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, “ববি কাটারিয়ার জন্য কি নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে?”
New rule for Bobby kataria ? @JM_Scindia @DGCAIndia @CISFHQrs pic.twitter.com/OQn5WturKb
— Nitish Bhardwaj (@Nitish_nicks) August 11, 2022
টুইটারে এই ধরণের প্রশ্ন ওঠা শুরু হতেই, বৃহস্পতিবার (১১ অগস্ট) অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর কাছে মুখ খুলেছেন। কাটারিয়ার আচরণকে “বিপজ্জনক” বলে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে। এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেছেন, “এর তদন্ত করা হচ্ছে। এই ধরনের বিপজ্জনক আচরণের কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি ব্যুরো জানিয়েছে, ঘটনাটি বেশ পুরোনো, গত জানুয়ারি মাসের। স্পাইস জেটের বিমানে দুবাই থেকে নয়া দিল্লি এসেছিলেন বলবিন্দর কাটারিয়া। ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি দিল্লিতে অবতরণ করেছিলেন। এইবিষয়ে একটি এফআইআর দায়ের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
Investigating it. There will be no tolerance towards such hazardous behaviour: Civil Aviation Minister Jyotiraditya Scindia on the viral video of a man smoking inside a flight
(File photo) https://t.co/jcpgFAkDu1 pic.twitter.com/1sRDyEi5a9
— ANI (@ANI) August 11, 2022
স্পাইসজেট সংস্থার এক মুখপাত্রও এদিন জানিয়েছেন, গত জানুয়ারি মাসেই ভিডিয়োটি তাদের নজরে আনা হয়েছিল। বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়েছিল। উড়ান সংস্থাটি এই ঘটনার বিষয়ে গুরুগ্রাম পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছে। স্পাইসজেট সংস্থার ওই মুখপাত্র বলেছেন, “উক্ত যাত্রী এবং তাঁর সহযাত্রী বিমানের ২১তম সারিতে ভিডিয়োটি শ্যুট করেছিলেন। সেই সময় কেবিন ক্রুরা অন-বোর্ডিং প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে ব্যস্ত ছিলেন। যাত্রী বা ক্রু সদস্যদের কেউই ওই ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ২০২২ সালের ২৪ এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি এয়ারলাইন্সের নজরে এসেছিল। বিষয়টি অসামরিক বিমান চলাচলের প্রয়োজনীয়তার বিধান অনুসারে গঠিত অভ্যন্তরীণ কমিটির কাছে জানানো হয়েছিল। উল্লিখিত যাত্রীকে ফেব্রুয়ারী মাসে ১৫ দিনের জন্য এয়ারলাইন্স সংস্থাটি নো-ফ্লাইং তালিকায় রেখেছিল।”
ভিডিয়োটি এখন আর ববি কাটারিয়ার ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম পেজে পাওয়া যায় না। তবে তাঁর ধূমপানের ভিডিয়োটি নিয়ে নতুন করে হইচই শুরু হওয়ার পর, আত্মপক্ষ সমর্থনই করেছেন ববি কাটারিয়া। নিজের ইনস্টাগ্রাম পেজে এই ইনফ্লুয়েন্সার ঘটনাটি সম্পর্কে সংবাদ প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতেই সংবাদমাধ্যম এই ঘটনা নিয়ে আওয়াজ তুলছে। লিখেছেন, “শুধুমাত্র টিআরপি দরকার। যা কিছু বলুন এবং রাজনীতিবিদদের ব্যস্ত করে তুলুন।” তিনি যাই বলুন না কেন, বিমানের কেবিনে ধূমপান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সহযাত্রীদের অসুবিধার বিষয় তো আছেই, পাশাপাশি, বিমানের কেবিনের ভিতর ধূমপান থেকে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডের গুরুতর ঝুঁকি থাকে। কারণ, বিমানের কেবিনে বাড়তি চাপে বাতাস রাখা হয়। এই কারণেই ভারতে যাত্রীবাহী বিমানগুলিতে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যাত্রীদের লাইটার বা দেশলাই নিয়েও বিমানে উঠতে দেওয়া হয় না।