নয়া দিল্লি: যত দিন যাচ্ছে ততই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য়ে ধসের প্রবণতা বাড়ছে। গত কয়েক বছরে উত্তর ভারত থেকে উত্তর-পূর্ব, এমনকি দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্যেও নিয়মিত ধস নেমেছে। বহু ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো, গত দুই দশকে ভারতের কোথায় কোথায় সবথেকে বেশি ধস নেমেছে, সেই সম্পর্কে উপগ্রহ তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে, হায়দরাবাদের ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারের বিজ্ঞানীরা ১৯৯৮ থেকে ২০২২ সালে মধ্যে ঘটা প্রায় ৮০,০০০ ধসের একটি সর্বভারতীয় তথ্যভান্ডার তৈরি করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত দুই দশকে ভারতে সবথেকে বেশি ধস নেমেছে উত্তরাখণ্ডের দুই জেলা – রুদ্রপ্রয়াগ এবং তেহরি গারওয়ালে। এই দুই অঞ্চলে শুধু ভূমিধস বেশি হয়েছে তাই নয়, অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে ধসের ক্ষতিও হয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণে।
বিশ্বের প্রথম চার ভূমিকম্পপ্রবণ দেশের অন্যতম ভারত। তুষারাবৃত এলাকাগুলি বাদ দিলে, দেশের ১২.৬ শতাংশেরও বেশি এলাকায় ধস নামার ঝুঁকি রয়েছে। হিমালয়, পশ্চিমঘাট, কোঙ্কন পাহাড়, পূর্বঘাটের পাহাড়ি এলাকাগুলি ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঘন বসতির কারণে অত্যন্ত ধসপ্রবণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই এলাকাগুলিতে ধসের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ১৭টি রাজ্য এবং ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ১৪৭টি ধস-প্রবণ জেলা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের অবনতি এবং চরম আবহাওয়ার কারণেই গত কয়েক বছরে ভূমিধসের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়েছে।
হিমালয় অঞ্চল এমনিতেই ধসপ্রবণ। সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান জনঘনত্ব, প্রধান প্রধান তীর্থস্থান এবং পর্যটনস্থলের অবস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের মতো হিমালয় অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে দুর্যোগের প্রভাব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ৬৪টি জেলাও ধস প্রবণ জেলাগুলির তালিকায় স্থান পেয়েছে। কেরলের মতো দক্ষিণী রাজ্যগুলিতে আবার ধসের সংখ্যা কম হলেও, জনঘনত্ব বেশি থাকার কারণে ধসের ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। ধসে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ ১০ জেলার তালিকায় রয়েছে উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ এবং তেহরি গারওয়াল জেলা ছাড়াও কেরলের ত্রিশুর, পালাক্কাড়, মলপ্পুরম, কোঝিকোড়, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি, পুঞ্চ, সিকিমের দক্ষিণ ও পূর্ব জেলা।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাইক্রোওয়েভ স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে মহাকাশ থেকে কোনও এলাকায় কয়েক মিলিমিটার পর্যন্ত স্থানচ্যুতি সনাক্ত করা যায়। কিন্তু ঠিক কোথায় ভূমিধস হবে, তার ভবিষ্যদ্বাণী করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গিয়েছে। বর্ষাকালে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়, উপগ্রহ এবং আবহাওয়া বিভাগের তথ্য ব্যবহার করে আঞ্চলিকভাবে প্রাথমিক সতর্কতা দেওয়া হয়।