নাগপুর: সাম্প্রতিক সময়ে বোমা হামলার হুমকির কারণে বেশ কয়েকটি উড়ান দেরিতে ছেড়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিমানবন্দরগুলিতে। তবে, সবকটি হুমকিই ছিল প্রতারণারমূলক। সত্যি সত্যি কোনও বোমা হামলার হুমকি ছিল না। অবশেষে এই প্রতারণামূলক হুমকির নেপথ্যের অন্তত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল নাগপুর পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে তার নাম, জগদীশ উইকে। বয়স ৩৫ বছর। দিল্লি থেকে নাগপুরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পেশায় তিনি একজন লেখক, মহারাষ্ট্রের মাওবাদী-অধ্যুষিত গোন্দিয়া জেলার বাসিন্দা। ফোনকল এবং ইমেলের মাধ্যমে এয়ারলাইন্স, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্তাদের কাছে ১০০টিরও বেশি প্রতারণামূলক বোমা হামলার হুমকি পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই একই কারণে ২০২১ সালেও তাঁকে একবার গ্রেফতার করা হয়েছিল।
পুলিশ জগদীশ উইকের মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেগুলি থেকেই হুমকি-বার্তা পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাঁর আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে তাঁকে ধরেছে নাগপুর পুলিশ। গত কয়েক মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বোমা রাখা আছে বলে দাবি করে, আসন্ন বিস্ফোরণের সতর্কতা দিয়ে অসংখ্য জায়গায় ইমেল পাঠিয়েছেন তিনি। শুধুমাত্র ২৫ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে, তিনি ভারতের ৩০টি জায়গায় বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের মতো বড় মাপের রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি কর্তাদের পর্যন্ত হুমকি পাঠিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকটি ইমেলে তিনি সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং নিরাপত্তাগত হুমকির বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ ভাগ করে নেবেন বলে, বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর জগদীশ উইকে দিল্লিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি কিছু নথি প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও প্রবেশ করেছিলেন। পুলিশ তাঁকে সেই বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে, এখনও পর্যন্ত জগদীশের সঙ্গে কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের সন্দেহ, তিনি প্রচার আকর্ষণ করার লক্ষ্যেই এই হুমকি দিতেন। আসলে, সন্ত্রাসবাদের উপর তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম, ‘আতঙ্কবাদ – এক তুফানি রাক্ষস’। এই বইটি প্রকাশের অনুমোদন চেয়ে তিনি গত জানুয়ারি থেকে প্রায় ১০০বার প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় এবং অন্যান্য আধিকারিকদের কাছে ইমেল পাঠিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জবাব না পেয়ে হতাশা থেকেই তিনি হুমকি দিতে শুরু করেন বলে মনে করছে পুলিশ।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে, নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবিন্দর সিংঘল বলেছেন, “প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তিনি বারবার ইমেল করে তাঁর বই প্রকাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অন্যান্যদের বলেছেন। কিন্তু পরে, তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে প্রতারণামূলক হুমকি মেইল পাঠাচ্ছেন।” অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় পাটিলের মতে, সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে জগদীশ উইকের বইটিতে কোনও প্রকৃত তথ্য নেই। যা আছে তা হল সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে কিছু ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। যেগুলি ইন্টারনেটেই রয়েছে। ২০২১ সালেও তাঁকে একবার আপত্তিকর ইমেল পাঠানোর জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। আরেকটি ক্ষেত্রেও, চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গোপন আঁতাত আছে অভিযোগ করার জন্যও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তবে, কোনও ক্ষেত্রেই কোনও অপরাধ নথিভুক্ত করা হয়নি। আপাতত নাগপুর পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগের আওতায় রয়েছেন তিনি। তবে, তিনি জেরার মুখে বারবার তিনি কাহিনি বদলাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।