নয়া দিল্লি: তিহার জেলে হেনস্থার হাত থেকে বাঁচতে আম আদমি পার্টির নেতা তথা দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে ‘প্রোটেকশন মানি’ দিতে হচ্ছে বলে দাবি করলেন এক জেলবন্দি। সূত্রের খবর, সুকেশ চন্দ্রশেখর নামে ওই জেলবন্দি এই বিষয়ে একটি চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনাকে। সেই চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে আপ দলকে ‘জালিয়াতদের দল’ বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। তবে, মঙ্গলবার এই দাবি আপ দলের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরীবাল।
বিজেপির অভিযোগ, জেলবন্দি সুকেশ চন্দ্রশেখর সব মিলিয়ে মোট ৬০ কোটি ঘুষ দিয়েছে আম আদমি পার্টিকে। এর মধ্যে ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে রাজ্যসভার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য। এদিন এই বিষয়ে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, ‘প্রতারকদের ঘরে প্রতারণা হয়েছে। সুকেশ চন্দ্রশেখর ঠগ, আর মহাঠগ হল আম আদমি পার্টি এবং সত্যেন্দ্র জৈন।’
সূত্রের খবর, ভিকে সাক্সেনাকে লেখা চিঠিতে সুকেশ দাবি করেছে, সত্যেন্দ্র জৈন তিহার জেলে আসার পর থেকে, তাকে যারপরনাই হেনস্থার এবং হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকেই সত্যেন্দ্র জৈনকে চিনত সে। সেই সময় থেকে তাকে ৫০ কোটি টাকারও বেশি দান করতে হয়েছে আপ দলের তহবিলে। এর বদলে তাকে দক্ষিণ দিল্লিতে দলের এক গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যসভার মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে বেশ কয়েকজন হাই প্রোফাইল ব্যক্তিত্বদের থেকে তোলা আদায়ের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিহার জেলে বন্দি হয়েছিল সুকেশ চন্দ্রশেখর। তারপরও জেলে এসে তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন সেই সময়ের দিল্লির কারাগার মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন।
এরপর ২০১৯ সালে ফের কারাগারে এসে দেখা করেছিলেন সত্যেন্দ্র জৈন। সেই সময় থেকে তাঁকে প্রোটেকশন মানি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। জেলে নিরাপদে থাকার জন্য, প্রতি মাসে ২ কোটি টাকা করে দিতে বলা হয়েছিল। ডিজি (কারা) সন্দীপ গোয়েলকে আলাদা করে দেড় কোটি টাকা দিতে বলা হয়েছিল। এইভাবে ২-৩ মাসে তার থেকে ১০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সুকেশ।
চলতি বছরের মে মাস থেকে, এক তহবিল তছরূপের মামলায় সত্যেন্দ্র জৈনেরও জায়গা হয়েছে ওই একই কারাগারে। তারপর থেকে ডিজি (কারা)-কে ব্যবহার করে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে সুকেশ। গত মাসে এক তদন্ত চলাকালীন তাঁর দেওয়া অর্থের বিশদ তদন্তকারীদের জানানোর পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিন, এই সমস্ত অভিযোগের মিথ্যা বলে দাবি করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর পাল্টা দাবি গুজরাট নির্বাচনের আগ দিয়ে মোরবির সেতু দুর্ঘটনায় চাপে পড়েছে বিজেপি। মানুষ আরও বেশি করে আপ দলের প্রতি ঝুঁকছেন। তাই ওই দুর্ঘটনা থেকে সকলের দৃষ্টি ঘোরাতেই এই ‘চাঞ্চল্যকর এবং সাজানো’ অভিযোগ তুলছে বিজেপি। তিনি বলেন, “ওরা মোরবি থেকে মানুষের মনোযোগ ঘোরাতে চাইছে। গুজরাট নির্বাচনের আগে ওরা ভয় পেয়েছে। এতদিন নির্বাচনের সময় ওদের কিছু করতে হত না। কারণ বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে আঁতাত রয়েছে। এবার আপ আসায় ওরা চাপে পড়ে গিয়েছে। ওরা এতটাই মরিয়া যে সত্যেন্দ্র জৈনের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর রটাতে প্রতারকদের সাহায্য নিচ্ছে। মদ মামলায় ফাঁসাতে চাইছে মণীশ সিসোদিয়াকেও।”