নিউ ইয়র্ক: রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার সমান্তরালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, মহম্মদ ইউনুস। শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক না হলেও, ভারতীয় সময় অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বৈঠক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বৈঠকে দুজনেই বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে একমত হন। রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৯তম সাধারন অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন মোদী ও ইউনুস। দুই রাষ্ট্রনেতার প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বর্তমানে নিউইয়র্কে আছেন জয়শঙ্কর এবং তৌহিদ হোসেন। প্রসঙ্গত বাংলাদেশের ক্ষমতা থেকে শেখ হাসিনার বিদায়ের পর, এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হল।
বৈঠকের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় করা এক পোস্টে এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “আজ সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক হল। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।” অন্যদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বৈঠকের একটি ছবি পোস্ট করা হয়। সঙ্গে তারা লিখেছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৯তম সাধারণ সভার পাশে, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেন এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক স্বার্থের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।” তবে, দুই দেশের মধ্যে যে অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ রয়েছে, সেই শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে কোনও কোনও কথা হয়েছে কিনা, কোনও পক্ষ থেকেই তা জানানো হয়নি।
Had a meeting with Foreign Affairs Adviser Md. Touhid Hossain of Bangladesh in New York this evening.
The conversation focussed on our bilateral ties. pic.twitter.com/UNtNyHGHyQ
— Dr. S. Jaishankar (@DrSJaishankar) September 24, 2024
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু, ভারত সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেনি। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর তিনদিনের মার্কিন সফরে যাবতীয় কর্মসূচি আগে থেকেই স্থির ছিল। তার উপর, দুই রাষ্ট্রনেতা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নিউ ইয়র্কে এসেছেন। তাঁদের প্রস্থানের সময়ও ভিন্ন। এর মধ্য়ে মহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য নতুন করে সময় বের করা যায়নি। সেই কারণেই বাংলাদেশের আর্জি ফেরাতে হয়েছে নয়া দিল্লিকে। তার বদলে এদিন বৈঠক করলেন দুই দেশর বিদেশমন্ত্রীরা।
🇧🇩Foreign Affairs Adviser, HE Md. Touhid Hossain and 🇮🇳External Affairs Minister, HE @DrSJaishankar, met at #UNGA79 sidelines and discussed issues of mutual interest between #Bangladesh|#India.@IndianDiplomacy @Yunus_Centre @ChiefAdviserGoB pic.twitter.com/gbFomhRS6T
— Ministry of Foreign Affairs, Bangladesh (@BDMOFA) September 24, 2024
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে এসেছেন শেখ হাসিনা। তারপর, দুই বিদেশমন্ত্রীর এদিনের আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষিতে, দক্ষিণ এশিয়ার দুই দুই মিত্র দেশের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা গিয়েছে। এর আগে একাধিক সাক্ষাতকারে, বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের জন্য ভারত খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশি দেশ। নয়া দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী ঢাকা। তবে, বাংলাদেশের জনগণের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ভারতকে। ভারত এর আগে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা এবং তাঁর দলের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চেয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। তার পরিবর্তে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে নয়া দিল্লিকে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, বলেছিলেন তৌহিদ হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মহম্মদ ইউনুসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক না হলেও, এদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান। গত প্রায় ৩০ বছরে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়নি। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর ‘নয়া বাংলাদেশ’ গঠনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সাহায্য়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কাজেই, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।