নয়াদিল্লি: ২০১৪ সালের ২৬ মে। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদী। আর মাস তিনেকের মধ্যেই দেশের দরিদ্র মানুষকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করতে নিলেন বড় বড়ক্ষেপ। চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা। দেশের একটা বড় অংশের মানুষের তখনও ছিল না ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই ২০১৪ সালের ২৮ অগস্ট এই যোজনা শুরু করেন তিনি। আজ এই যোজনা দশ বছর পূর্ণ করল। প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনায় উপভোক্তার সংখ্যা বর্তমানে ৫৩.১৩ কোটি। জনধন যোজনায় দেশের দরিদ্র অংশের মানুষ শুধু ব্যাঙ্কিং সুবিধাই পাচ্ছেন না। এর সঙ্গে আরও একাধিক সুবিধা জুড়ে রয়েছে। সেইসব দিক তুলে ধরলেন বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ব্লুক্রাফট ডিজিটাল ফাউন্ডেশনের সিইও অখিলেশ মিশ্র।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর জনধন যোজনাই মোদীর প্রথম বড় প্রকল্প। এক্স হ্যান্ডলে অখিলেশ মিশ্র লেখেন, যেহেতু, ক্ষমতায় এসেই এমন একটি বড় যোজনা চালু করেন। যার অর্থ, কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নয়। নিজের অন্তরের বিশ্বাস থেকে এই প্রকল্প শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
দরিদ্রদের আর্থিক স্বাবলম্বী করার ভিত ছিল জনধন যোজনা। এর সঙ্গে আধার ও মোবাইল নম্বর যোগ করে গরিবের কাছে একাধিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। জনধন-আধার-মোবাইল (JAM) এই তিনের মেলবন্ধনে দরিদ্ররাও সাধারণ আর্থিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে ওঠেন। কী কী সুবিধা পাওয়া গিয়েছে, তারও ব্যাখ্যা দিলেন ব্লুক্রাফট ডিজিটাল ফাউন্ডেশনের সিইও।
১. ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার ২০১৪: জনধন যোজনা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপকদের কাছে অর্থ সরাসরি পৌঁছে যায়। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। এখনও পর্যন্ত ৩৮ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি পৌঁছে গিয়েছে উপভোক্তাদের কাছে।
২. মুদ্রা ঋণ ২০১৫: জামানত-মুক্ত ঋণ পাওয়া যাওয়ায় দরিদ্রের বোঝা কমেছে। মহাজনদের কাছে ঋণের জালে আর জড়িয়ে পড়তে হয় না গরিব মানুষকে। এখনও পর্যন্ত ৪৬ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে।
৩. সামাজিক নিরাপত্তা ২০১৫: জীবনবিমা, দুর্ঘটনা বিমা, পেনশন প্রকল্প। ৪৫ কোটির বেশি সুবিধাপ্রাপক রয়েছেন।
৪. পিএম আবাস যোজনা ২০১৫: প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার জেরে আবাস যোজনার টাকা সরাসরি সুবিধাপ্রাপকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৪ কোটির বেশি বাড়ি এই সুবিধা পেয়েছে।
৫. প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা ২০১৬: কোনও কারণে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকদের দুশ্চিন্তা দূর করতেই এই বিমা। ৮ কোটির বেশি কৃষক এই বিমার আওতায় রয়েছেন।
৬. ইউপিআই-ডিজিটাল পেমেন্টস ২০১৬: গ্রামে ফল বিক্রেতা থেকে ছোট ছোট দোকান। অনলাইনে লেনদেন ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্বের অনলাইন লেনদেনের ৪০ শতাংশ এখন হয় ভারতে।
৭. আয়ুষ্মান ভারত ২০১৮: বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য প্রকল্প হল আয়ুষ্মান ভারত। আগে দরিদ্র মানুষ স্বাস্থ্যবিমার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না। এখন তা বাস্তব। দেশজুড়ে ৫০ কোটির বেশি মানুষ আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পান।
৮. পিএম কিষাণ সম্মান নিধি ২০১৯: কৃষকদের আর্থিকভাবে সাহায্য করতে এই প্রকল্প চালু করে কেন্দ্র। কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি বছরে তিন কিস্তিতে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ১১ কোটি বেশি কৃষক এতে লাভবান হন।
৯. ক্রাইসিস সার্পোট ২০২০-২১: করোনা দেশজুড়ে থাবা বসানোর সময় সাধারণ মানুষের জন্য পদক্ষেপ করে কেন্দ্র।
১০. প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি প্রকল্প ২০২০: রাস্তার ছোট বিক্রেতাদের সাশ্রয়ী মূল্য ঋণ দিতে এই প্রকল্প। জনধন প্রকল্পের জন্যই ব্যাঙ্কগুলি এইসব ছোট বিক্রেতাদের ঋণ দিতে দু’বার ভাবে না।
As we celebrate #10YearsOfJanDhan, it is remarkable to think of the complex mapping and the step-by-step stacking of the economic architecture that PM Modi had in his mind from the beginning itself.
Remember, Jan Dhan is the FIRST flagship scheme of PM Modi, launched within…
— Akhilesh Mishra (@amishra77) August 28, 2024
এর বাইরেও জনধন যোজনার আরও সুফল রয়েছে। একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের আগে মিডলম্যানদের কাটমানি দিতে হত। জনধন যোজনার ফলে তা বন্ধ হয়েছে। কোনও দরিদ্র মহিলা ব্যবসা করতে গেলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেতেন না। তখন মহাজনদের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে হত। ফলে জনধন যোজনা সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদার সমাধান করেছে বলে মন্তব্য করেন অখিলেশ মিশ্র।
তিনি আরও লেখেন, ১৯৯১ সাল থেকে আর্থিক সংস্কারের ইতিহাসে জনধন যোজনা সবচেয়ে বড় সংস্কার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেসব কাজ করেছেন, তার উপরের দিকে থাকবে এই যোজনা। আর এই ভাবনা ২০১৪ সালেই ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)