দেরাদুন: সাম্প্রতিককালে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল। মেঘভাঙা বৃষ্টি থেকে ভূমিধসে বিধ্বস্ত হিমালয়ের কোলের এই দুটি রাজ্য। এর মধ্যে উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার যোশীমঠের (Joshimath) অবস্থা ভয়াবহ। ৮ কেন্দ্রীয় সংস্থার যৌথ সমীক্ষায় এমনই রিপোর্ট উঠে এসেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া ও হিন্দু তীর্থক্ষেত্র সন্নিবিষ্ট এই জেলাকে ‘উচ্চ-মাত্রার ভূমিকম্প প্রবণ’ শহরের তকমা দিয়েছে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট। আর যোশীমঠকে ‘নো নিউ কনস্ট্রাকশন জোন’ বলেও উল্লেখ করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা (NDMA)।
সম্প্রতি একের পর এক ভূমিধসে বিধ্বস্ত যোশীমঠ। চলতি বছরই একাধিকবার ভূমিধসের সাক্ষী হয়েছে এই শহর। পরিত্রাণ পেতে হাইকোর্টের নির্দেশে যোশীমঠের ধারণ ক্ষমতা ও বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি জরিপ করে কেন্দ্র পরিচালিত ৮টি জাতীয় সংস্থা। এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা (NDMA), সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্ট ইনস্টিটিউট, (CBRI), জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (GSI), ন্যাশনাল জিওপিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোলজি এবং আইআইটি রুরকি। এই ৮ সংস্থা যৌথভাবে ১৩০ পাতার একটি রিপোর্ট দিয়েছে। যার নাম, ‘পোস্ট ডিজাস্টার নিড অ্যাসেসমেন্ট’ (PDNA)। সেই রিপোর্টেই যোশীমঠকে কম্পমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সমগ্র যোশীমঠকে বিপদের মাত্রার নিরিখে ৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। বিপদের মাত্রার নিরিখে লাল, কালো, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করেছে NDMA। আবার যোশীমঠে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ভার বহন করছে বলে PDNA রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অত্যধিক জনসংখ্যা-অধ্যুষিত এলাকাতেই বেশি গভীর ফাটল রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে GSI। এর জন্য অপরিকল্পিত ও বিশৃঙ্খল নির্মাণকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পাহাড়ের কোলে যেভাবে বিস্ফোরণ ও ড্রিলিং করা হচ্ছে, সেটিও যোশীমঠে ভূমিধস নামার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ৮ কেন্দ্রীয় ইনস্টিটিউটের রিপোর্টে NTPC-কে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
তবে যোশীমঠকে বাঁচাতে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাগুলিতে নির্মাণ ভেঙে ফেলার ভাবনা-চিন্তা করছে রাজ্য প্রশাসন। উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মোরাবিলা দফতরের সচিব রঞ্জিত সিনহা বলেন, “যোশীমঠের হাই রিস্ক জোনের সমস্ত নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে।” যোশীমঠকে পুনর্নির্মাণ করতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ১,৪৬৫ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করেছে।
প্রসঙ্গত, যোশীমঠকে ভগবান বদ্রীনাথের শীতকালীন আসন বলা হয়। প্রতি বছর শীতকালে বদ্রীনাথের মূল মন্দির থেকে বিগ্রহ সরিয়ে নিয়ে আসা হয় যোশীমঠের বসুদেবা মন্দিরে। এছাড়া এই শহর শিখদের তীর্থক্ষেত্র হেমকুন্দ সাহিবের গেটওয়ে।