জোশীমঠ: রাতারাতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভবিষ্যৎ। স্বপ্নের বাড়ি ছেড়ে ঠিকানা হয়েছে সরকারের তরফে দেওয়া অস্থায়ী শিবিরের ঘর। মাথার উপরের ছাদটুকু থাকবে কিনা, তার নিশ্চয়তাও নেই। এই পরিস্থিতিতে লোটা-কম্বল গুটিয়ে জোশীমঠ ছেড়েছেন কয়েকশো পরিবার। সরকারের তরফে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও, সেই বাড়ি বা ক্যাম্পে ঠাই হয়নি লুসি, বোজো-দের। এতদিন যাদের পরিবারের অংশ বলেই মনে করতেন, তাদের ফেলে আসতে হয়েছে ফাটল ধরা ওই বাড়িগুলিতেই। কারণ সরকারের তরফে পোষ্য়দের (Pets)জন্য় থাকার কোনও ব্যবস্থা করেনি সরকার। সেই কারণেই তাদের মালিকদের ঠিকানা বদল হলেও, পোষ্যরা পড়ে রয়েছে জোশীমঠের (Joshimath) ‘রেড জ়োনে’ (Red Zone) থাকা বাড়িগুলিতেই। তাদের কি কোনও ভবিষ্যৎ নেই? এই প্রশ্নই উঠে আসছে।
কুকুর থেকে বিড়াল, এমনকী গরুও পোষ্য ছিল জোশীমঠের একাধিক বাসিন্দার। কিন্তু বাড়িতে ফাটল ধরার পরই সরকারের তরফে তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সেই সমস্ত বাড়ির মালিকরা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি তাদের পোষ্যদের। কারোর পোষা কুকুরকে দেখা যাচ্ছে ঠায় বাড়ির বারান্দায় বসে থাকতে, কারোর পোষ্য আবার রেড জ়োনে থাকা জোশীমঠের রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবারের খোঁজে। পরিবার পিছু একটি করেই ঘরের ব্যবস্থা করায়, কোনও পরিবারই তাদের পোষ্যদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি।
কিন্তু এতদিন যারা পরিবারের সদস্য ছিল, তাদের কথা কীভাবে রাতারাতি ভুলে যাবেন? সেই কারণেই জোশীমঠের ঘরছাড়া বহু পরিবারই সকাল হতেই চলে আসছেন নিজেদের ভাঙা বাড়িতে। সেখানে নিজেদের পোষ্যকে খাবার দিচ্ছেন, সময় কাটাচ্ছেন। বিকেলে সরকারের দেওয়া অস্থায়ী ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার আগে পোষ্যদের ওই ফাটল ধরা বাড়ির ভিতরেই ঢুকিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। নাহলে রাতে তুষারপাতের কারণে ওদের ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
এদিকে, জোশীমঠে ভাঙন ধরতেই সেখানকার পোষ্যদের অবস্থা জানতে পেরে নড়েচড়ে বসেছে বহু পশুপ্রেমী সংস্থা। উত্তরাখণ্ডের অ্য়ানিম্যাল শেল্টার, যেখানে পরিত্যক্ত পশুদের আশ্রয় দেওয়া হয়, তারা পৌছেছেন জোশীমঠে। সেখানে বিভিন্ন বাড়ির পোষ্য কুকুরদের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে। ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, পার্বত্য় এই অ়ঞ্চলে প্রায় সময়ই চিতাবাঘ লোকালয়ে প্রবেশ করে। সুরক্ষার জন্য়ই অনেকে পাহাড়ি কুকুর পোষেন। ভূমিধস নামার পর তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি।
হিসাব অনুযায়ী, জোশীমঠের চারটি ক্ষতিগ্রস্ত ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট ১৯৪টি পোষ্য কুকুর ও ৭৫৫টি গরু রয়েছে। ৭০টি পরিবারকে এখনও অবধি স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে যাদের পোষা কুকুর বা বিড়াল ছিল, তারা বাধ্য হয়ে পোষ্যদের বাড়িতে রেখে গিয়েছেন। সকলেই জানিয়েছেন, তাদের পোষ্যদের এভাবে ফেলে রাখতে চান না। কিন্তু তাদের হাতে আর কোনও সুযোগও নেই। এই পরিস্থিতিতেই এগিয়ে এসেছে পশুপ্রেমী সংস্থাগুলি। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে পশুদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।