বেঙ্গালুরু: শুক্রবার রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং কর্নাটকে চলছে রাজ্যসভার নির্বাচন। অধিকাংশ জায়গাতেই এই নির্বাচন ঘিরে চাপান-উতোর চলছে বিজেপি এবং কংগ্রেস বা কংগ্রেসের জোটসঙ্গীদের মধ্যে। তবে, দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকে রাজ্যসভার নির্বাচন নিয়ে তীব্র মন কষাকষি শুরু হল কংগ্রেস এবং জেডি(এস)-এর মধ্যে। জেডি(এস)-এর অন্তত ৮ জন সাংসদ এদিন কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। একজন জেডি(এস) বিধায়ক তো নিজে মুখেই সেই কথা স্বীকার করেছেন। অথচ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কংগ্রেস এবং জেডি(এস) জোট গড়ে রাজ্যে এক বছর সরকার চালিয়েছিল।
এদিন সকালেই গুঞ্জন রটে, ৮ জেডি(এস) বিধায়ক কংগ্রেস দলের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। তবে, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডি(এস) নেতা এইচডি কুমারস্বামী এই খবর মানতে চাননি। ‘ভুল তথ্য’ বলে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কুমারস্বামী বলেন, ‘আমাদের বিধায়করা ক্রস ভোট দেবেন বলে একটি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সামগ্রিকভাবে, আমাদের দল অক্ষত আছে বলেই আমাদের বিধায়করা বার্তা দিয়েছেন’। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এই একতার ছবিই তাঁকে আগামী বছরের নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
তবে, তাঁর এই আত্মবিশ্বাসে জল ঢেলে দিয়েছেন জেডি(এস) বিধায়ক শ্রীনিবাস গৌড়া। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া আসতে না আসতেই বিধানসৌধ প্রাঙ্গনে শ্রীনিবাস গৌড়া প্রকাশ্যেই বলেন, ‘আমি কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছি, কারণ আমি কংগ্রেস দলকে ভালবাসি’। তাঁর এই স্বীকারোক্তির একটি ভিডিও ক্লিপ টুইট করেছে সংবাদ সংস্থা এএনআই। তবে, এর আগেও তিনি জেডি(এস) ছেড়ে কংগ্রেস যোগ দেওযার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে শুধু শ্রীনিবাস গৌড়াই নন, দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার অভিযোগ রয়েছে আরও দুই জেডি(এস) বিধায়কের বিরুদ্ধে। এসআর শ্রীনিবাস ফাঁকা ব্যালট জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর কাছে অবশ্য তিনি তা অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে এইচডি রাভান্না আবার তাঁর ব্যালট জমা দেওয়ার আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমারকে দেখিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই, দলীয় বিধায়কদের এই আচরণে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন কুমারস্বামী। দলীয় বিধায়কদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘এত নিম্ন স্তরের রাজনীতি, তাঁরা কি আদৌ বিধায়ক?’ শ্রীনিবাস গৌড়ার সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘তাঁর যদি কোনও শালীনতা থাকে, তিনি পদত্যাগ করে রাজনীতি করুন’। কংগ্রেস দল তাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলকে ভাঙিয়ে আখেরে বিজেপিরই সুবিধা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কুমারস্বামী। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া জেডি(এস) বিধায়কদের প্রতি একটি খোলা চিঠি লিখে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কুমারস্বামীর দাবি কংগ্রেস দল, জেডি(এস)-এর সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই দ্বিতীয় প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস চাইলে আনুষ্ঠানিকভাবে জেডি(এস) দলের সমর্থন চাইতে পারত। দল ভাঙানোর প্রয়োজন ছিল না।
কর্নাটকে মোট চারটি রাজ্যসভা আসনে নির্বাচন হচ্ছে। প্রত্যেক প্রার্থীর জয়ের জন্য ৪৫টি করে ভোট প্রয়োজন। শাসক দল বিজেপি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ-সহ মোট তিনজন প্রার্থী দিয়েছে। গেরুয়া শিবিরের বিধায়কের সংখ্যা ১২১। প্রথম দুই প্রার্থীকে সহজে জিতিয়ে আনতে পারলেও, তৃতীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে ৭০ বিধায়ক হাতে নিয়ে দুই জন প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। তাদেরও এক প্রার্থীর জয় নিশ্চিত, দ্বিতীয় প্রার্থীকে লড়াই করতে হবে। ৩২ বিধায়কের শক্তি নিয়ে জেডি (এস) দলও একজন প্রার্থী দিয়েছে।