কাশী: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর দেশের যে সব প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছেন, তাঁর মধ্যে অন্যতম কাশী বিশ্বনাথ করিডর। গত কয়েক বছর ধরে একটু একটু করে বদলে গিয়েছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। সেই প্রকল্প এবার শেষের পথে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর, সোমবার মোদী নিজে উদ্বোধন করবেন তাঁর সেই স্বপ্নের প্রকল্প।
উত্তরপ্রদেশের কাশী দেশের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র। আর সেই শহরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যোগাযোগও বহুদিনের। প্রধানমন্ত্রী বা বারাণসীর সাংসদ হওয়ার অনেক আগে থেকেই একাধিক বার বাবা বিশ্বনাথের মন্দির দর্শন করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি মনে করেন, যতবার তিনি এই শহরে এসেছেন ততই তাঁর সঙ্গে এই শহরের আত্মিক যোগাযোগ বেড়েছে। আর সেই কারণেই এই শহরের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনার কথা ভেবেছেন তিনি। নতুন করে সাজিয়ে তুলতে চেয়েছেন কাশীকে।
প্রধানমন্ত্রী যখন লোকসভা নির্বাচনের আগে মনোনয়ন জমা দিতে কাশীতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি নিজে এখানে আসিনি। আমাকে নিয়ে আসা হয়নি, মা গঙ্গা আমাকে ডেকেছেন।’ এরপরই কাশী শহরকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন তিনি। আর তারই প্রতিফলন দেখা যায় ভোলেবাবার শহরে। একটু একটু করে বদলে গিয়েছে ঐতিহ্যবাহী কাশী। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর একান্ত ইচ্ছে, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরনো গৌরব আবার ফিরিয়ে দেওয়া। আর সেই কারণেই কাশী বিশ্বনাথ করিডর তৈরি করেছেন তিনি।
কাশীতে এক দীর্ঘদিনের প্রথা রয়েছে। এখানে এসে ভক্তরা সাধারণত গঙ্গায় ডুব দিয়ে পুণ্যস্নান করেন। শুধু তাই নয় গঙ্গা থেকে জল তুলে নিয়ে যান বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এত বেশি নির্মাণ তৈরি হয়েছে বিশ্বনাথ মন্দিরের আশেপাশে, যে সেই পরম্পরা বা রীতি আর চোখে পড়ত না। চারপাশে ঘর বাড়ি পেরিয়ে গঙ্গা থেকে বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা ভক্তদের জন্য খুব সুখকর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চান, সেই রীতি আবার ফিরিয়ে আনতে। তাই তিনি ঠিক করেন কাশী বিশ্বনাথ করিডর এমনভাবে তৈরি করবেন, যাতে গঙ্গা থেকে সরাসরি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের যোগাযোগ তৈরি হয়।
যে কোনও তীর্থক্ষেত্র মানেই সেখানে ভক্তদের মনে আধ্যাত্মিক অনুভুতিতে ভরে যায়। কিন্তু কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের চারপাশে এমন অবস্থা হয়েছিল যা দেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মনে হয়, ভক্তদের মনে সেই অনুভূতি সঞ্চার হচ্ছে না। চারপাশে নোংরা রাস্তা আর বড় বড় বিল্ডিং-এর মাঝে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ। তাই প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী চান, এমনভাবে রাস্তা তৈরি করতে যেখানে মন প্রস্ফুটিত হতে পারে। মোদী বলেছিলেন এমন এক রাস্তা তৈরি করতে হবে, যেখানে যে কোনও ভক্তের মন প্রস্ফুটিত হতে পারে।
২০১৯- এর 8 মার্চ সেই কাশী বিশ্বনাথ করিডর প্রকল্পের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘হয়তো ভোলেবাবাই আজ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। ভোলেবাবা হয়তো বলেছেন, বসে বসে তো অনেক কথা বল, এখানে এসে কিছু করে দেখাও। ভোলেবাবার সেই আদেশ আর আশীর্বাদের জন্যই আজ এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছি।’
যে অঞ্চল জুড়ে এই প্রকল্প তৈরি হচ্ছে, সেখানে ছিল অনেক ঘরবাড়ি। সে সব সরিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা এক কঠিন কাজ ছিল সরকারের কাছে। অনেকের জায়গা জমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে কারও কাছ থেকে জোর করে কিছু না নেওয়া হয়। যে কোনও সমস্যা সমাধানের জন্য ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। এলাকাবাসীর সঙ্গে বারবার কথা বলে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। যে অঞ্চল দিয়ে ওই করিডর তৈরি হবে, সেখানে এত বেশি ঘরবাড়ি ছিল যে করিডর তৈরি করা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শে কাজ এমনভাবে এগিয়েছে যাতে, ৪০০ পরিবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আর তার ফলেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে সহজেই। প্রকল্পের মাঝে কোন মামলা-মোকদ্দমাও হয়নি।
একদিকে যেমন জমি সংক্রান্ত সমস্যা এই প্রযুক্তির অন্যতম অন্তরায় ছিল, অন্যদিকে প্রকল্পের ডিজাইন কী হবে সেটাও ছিল একটা বড় চিন্তার বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে তাঁর পরিকল্পনা দিয়ে পুরো প্রকল্প সাজিয়েছেন। প্রকল্পের থ্রি ডি মডেল নিজে খতিয়ে দেখেছেন তিনি। ডিজাইন নিয়ে একাধিকবার মত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু প্রকল্পের পরিকল্পনা করাই নয়, সেই পরিকল্পনা রূপায়নের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর। এমনকি করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ভিডিয়ো কনফারেন্সে সবটা খতিয়ে দেখেছেন মোদী। তিনি বলেছেন, কঠিন সময়ের মধ্যেও কাশী দেখিয়ে দিয়েছে যে সে থেমে থাকে না।
আরও পড়ুন : PM Modi: দেশজুড়ে বিভিন্ন মন্দিরের অভূতপূর্ব উন্নয়ন, সৌজন্যে নরেন্দ্র মোদী