নয়া দিল্লি: দলীয় সমস্ত পদ ছেড়ে দিলেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের অন্যতম প্রধান মুখ কবিতা কৃষ্ণান। জোসেফ স্ট্যালিনের অধীনে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমান চিন সরকারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর অধীনস্ত ভারতের তুলনায় ওঠা কিছু ‘সঙ্কটজনক প্রশ্ন’এর কারণে দল ছাড়লেন তিনি। সিপিআই (এমএল) লিবারেশন দলের পলিট বুরোর একজন সদস্য ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের মহিলা শাখা, সর্বভারতীয় প্রগতিশীল মহিলা সমিতি বা এআইপিডব্লুএ-রও জাতীয় সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণান। তারও আগে ছাত্রী জীবনে ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদের সম্পাদক এবং আইসা (AISA) ছাত্র সংগঠনের সভাপতি।
ফেসবুকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর অনুরোধের ভিত্তিতে দল তাঁকে সমস্ত দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে। তিনি লিখেছেন, “ভারতে ফ্যাসিবাদ এবং ক্রমবর্ধমান সর্বগ্রাসীবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের লড়াইকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে, আমাদের অবশ্যই আমাদের অবশ্যই অতীত এবং বর্তমান সমাজতান্ত্রিক সর্বগ্রাসী শাসনের বিষয়গুলি-সহ বিশ্বব্যাপী সকল মানুষের জন্য একই গণতান্ত্রিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতার অধিকারকে স্বীকার করতে হবে। স্তালিনের শাসন, ইউএসএসআর, বা চিনকে ব্যর্থ সমাজতন্ত্র হিসাবে আলোচনা করাটা যথেষ্ট নয়, বরং এগুলিকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ কর্তৃত্ববাদ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার, যা সর্বত্র কর্তৃত্ববাদী শাসনের মডেল হিসেবে কাজ করছে।”
কৃষ্ণান আরও জানিয়েছেন, এখন থেকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলি উত্থাপন করবেন। দলীয় পদে থেকে এই প্রশ্নগুলি করা সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, “দলের কেন্দ্রীয় কমিটি আমার অনুরোধে রাজি হয়েছে। নেতৃত্বে থেকে এসব প্রশ্ন করা সম্ভব হয়নি। এটা পদত্যাগ নয়, দায়িত্ব থেকে সরে আসার বিষয়ে পারস্পরিক সম্মতি। দলের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। জানা গিয়েছে, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর কেন্দ্রীয় কমিটি গত ২৫ থেকে ২৭ অগস্টের মধ্যে বৈঠক করে। সেখানেই নেতৃত্বের কাছে পাঠানো কবিতা কৃষ্ণানের চিঠি নিয়ে আলোচনা হয়। তারপরই কৃষ্ণানকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় তিন দশক ধরে সিপিআই (এমএল) এবং দলের শাখা সংগঠনগুলিতে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণান। আরও জানিয়েছেন, এই আন্দোলনগুলি তাঁর জীবনের অংশ হয়েই থাকবে।
This is totalitarianism not “socialism” in any sense that Marx meant it. China is a dystopian nightmare. If any Indian communist thinks it’s ok for “communists” to rule like this, then they should ask themselves what kind of democracy they’re fighting for in India? https://t.co/mAEFOXrliL
— Kavita Krishnan (@kavita_krishnan) June 26, 2022
How much of the Left is ignorant of – or in wilful denial of – this fact? That the “miraculous industrialisation of USSR”under Stalin was possible because of the violent subjugation of Ukraine’s peasants (starvation, execution, exile) & colonial expropriation of Ukraine’s grain. https://t.co/WgmvA0YK1k
— Kavita Krishnan (@kavita_krishnan) July 3, 2022
বস্তুত, দলীয় পদ ছাড়ার আগে থেকেই সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলিতে তিনি এই প্রশ্নগুলিই উত্থাপন করছিলেন। গত জুলাই মাসেই যেমন তিনি বলেছিলেন, স্টালিনের অধীনে সোভিয়েত রাশিয়ায় যে শিল্পায়ন হয়েছিল, তার জন্য ইউক্রেনের কৃষকদের হিংসাত্মকভাবে পরাধীন করা হয়েছিল। তার আগে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন নাগরিকদের উপর চিন সরকারে নজরদারি নিয়েও। তিনি লিখেছিলেন, ভারতীয় কমিউনিস্টরা যদি মনে করে যে কমিউনিস্টদের এই শাসন সঠিক, তবে তাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে যে, ভারতে তারা ঠিক কোন ধরনের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে।