মুম্বই: ফুল ফোটার আগেই খসে গেল! আংটি বিনিময় হয়ে গিয়েছিল। নাইরোবি (Nairobi) গিয়েই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের আগে পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ নিতে তাঁদের ভিটেতে এসেছিলেন দম্পতি। সেটাই কাল হল! পূর্বপুরুষের দেশ, তাঁদের ভিটেতে বেড়াতে এসে যে এই মর্মান্তিক পরিণতি ঘটবে, তা কেউ কল্পনা করেননি। রবিবার মুম্বইয়ের গ্যালাক্সি হোটেলের (Galaxy hotel fire) অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবক-যুবতীর।
মুম্বইয়ের গ্যালাক্সি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ২ জন হলেন এই দম্পতি। তাঁদের নাম রূপল বেকারিয়া এবং কিষাণ হালাই। দুজনেই বর্তমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির বাসিন্দা ছিলেন। তবে প্যাটেল সম্প্রদায়ভুক্ত রূপলের শিকড় রয়েছে গুজরাটের ভুজ জেলার রামপার গ্রামে। বাগদত্তা কিষাণকে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে পূর্বপুরুষের ভিটে দেখতে এসেছিলেন রূপল। তারপর ফেরার পথেই ঘটে গেল মর্মান্তিক পরিণতি। গ্যালাক্সি হোটেলের অগ্নিকাণ্ডে রূপলের মা মঞ্জুলা বেকারিয়া এবং বোন আলপা বেকারিয়া গুরুতর আহত হয়েছেন।
গুজরাট থেকে মুম্বইয়ে কেন গেল বেকারিয়া পরিবার?
রূপল বেকারিয়া ও তাঁর পরিবার এবং বাগদত্তা কিষাণ হালাই ভুজ-সহ গুজরাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে নাইরোবি যাওয়ার বিমান ধরতেই মুম্বই এসেছিলেন। বিমান নির্ধারিত সময়ের থেকে দেরিতে আসবে ঘোষণা হলে এয়ারলাইন্সের তরফেই যাত্রীদের বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত গ্যালাক্সি হোটেলে থাকার বন্দোবস্ত করা হয়। কে জানত, ওই হোটেলেই আগুন লাগবে!
গ্যালাক্সি হোটেলে তৃতীয় তলে ছিল বেকারিয়া পরিবার
গ্যালাক্সি হোটেলের তৃতীয় তলে ছিলেন রূপল, তাঁর বাগদত্তা-সহ গোটা পরিবার। হোটেলের ৩০৪ নম্বর রুমে ছিলেন তাঁরা। দুপুর ১টা ১০ মিনিট নাগাদ হঠাৎ করেই হোটেলের দ্বিতীয় তলে আগুন লাগে। তারপর তৃতীয় তলে আগুন ছড়াতে সময় লাগেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেখা যায়, ৩০৪ নম্বর ঘরটির আসবাব থেকে বৈদ্যুতিক তার, এসি সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। এমনকি সিঁড়ির কাঠের রেলিং পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছে। রূপল ও কিষাণ রুম থেকে বেরোনোর সুযোগ পাননি। অগ্নিদগ্ধ হয়েই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। দমকলকর্মীদের সহায়তায় রূপলের মা ও বোন ওই রুম থেকে বেরোতে সক্ষম হলেও গুরুতর জখম হয়েছেন।
অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়েছেন কেনিয়াগামী বিমানের অন্য যাত্রীরাও
রূপল ও তাঁর পরিবার ছাড়াও ওই কেনিয়াগামী বিমানের অন্যান্য যাত্রীরাও গ্যালাক্সি হোটেলের তৃতীয় তলে ছিলেন। ফলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের অধিকাংশই ওই বিমানের যাত্রী এবং কেনিয়ার বাসিন্দা। রূপল ও কিষাণের মতোই হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরেক কেনিয়া নাগরিক কান্তিলাল বারার। এছাড়া আহতদের মধ্যে গুজরাটের পোরবন্দরের বাসিন্দাও রয়েছেন।
গ্যলাক্সি হোটেলের অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। হোটেলে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ঠিক ছিল না বলে কয়েকদিন আগেই নোটিশ দিয়েছেন বিএমসি। তারপরও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএমসি-র এক আধিকারিক।