Kerala lesbian couple: একসঙ্গেই থাকবেন লেসবিয়ান আদিলা ও ফতিমা, পরিবারের বাধা ভেঙে দিল আদালত

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঞ্জয় পাইকার

Jun 01, 2022 | 2:47 PM

Kerala lesbian couple: পরিবার, এমনকি পুলিশ তাঁদের সম্পর্কে বাধা দিলেও, মঙ্গলবার কেরলের এক লেসবিয়ান যুগলকে একসঙ্গে থাকার অনুমতি দিল কেরল হাইকোর্ট।

Kerala lesbian couple: একসঙ্গেই থাকবেন লেসবিয়ান আদিলা ও ফতিমা, পরিবারের বাধা ভেঙে দিল আদালত
(প্রতীকী ছবি)

Follow Us

কোচি: দুই জনের পরিবারই তাঁদের সম্পর্কের বিরোধী ছিল। পাশে দাঁড়ায়নি পুলিশও। তবে, তাঁদের দুই হাত এক করে দিল কেরল হাইকোর্ট। মঙ্গলবার, আদিলা নাসরিন এবং ফতিমা নুরা নামে এক সমকামী যুগলকে একসঙ্গে থাকার অনুমতি দিল হাইকোর্ট। পরিবার ও পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগে করে হেবিয়াস কর্পাস মামলার আবেদন করেছিলেন আদিলা। মাত্র ৫-৬ মিনিটের শুনানিতেই আদালত তাঁদের একসঙ্গে থাকার অনুমতি দেয়। কিন্তু, তার আগে কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের।

এই কাহিনির শুরুটা অবশ্য কয়েক বছর আগে। আদিলা (২২) ও ফতিমা (২৩) দুজনেই পড়াশোনা করতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই তাঁদের পরিচয় হয়েছিল। তার থেকে বন্ধুত্ব এবং প্রেম। অবশেষে পারস্পরিক সম্মতিতে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু, সৌদি আরবের ইসলামি আইন লেসবিয়ান বা সমকামী সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয় না। তাই আরব মুলুক থেকে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। ২০১৮ সালেই ভারতের শীর্ষ আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বাতিল করে। তারপর থেকে আর সমকাম অপরাধ নয়। সেই ভরসাতেই ফিরেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, আদালত বললেও, সমাজের চোখটা কি পাল্টে গিয়েছে? আদিলা এবং ফতিমার অভিজ্ঞতা কিন্তু ভয়ঙ্কর।

ভারতে ফিরে আসার পর, তাঁদের একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্তে বাধ সেধেছিল দু’জনেরই পরিবার। দুই তরফ থেকেই তাঁদের সম্পর্কের বিরোধিতা করা হয়েছিল। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, গত ১৯ মে তাঁরা পালিয়ে গিয়ে ‘বনজা কালেক্টিভ’ নামে কালিকটের এক এনজিও-র শেল্টার হোমে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু ওই রাতেই, উভয় পক্ষের অভিভাবকরাই পুলিশের সহযোগিতায় ওই শেল্টার হোমে পৌঁছে গিয়েছিল। আদিলা ও ফতিমা – দুজনকেই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ফতিমার বাবা-মা না পারলেও, আদিলার বাবা-মা ওই সমকামী যুগলকে আদিলার বাড়ি যেতে রাজি করাতে পেরেছিলেন। ভানাজা কালেকটিভকে তাঁরা বলেছিলেন, আদিলার সঙ্গে ফতিমারও দেখভাল করবেন তাঁরা।

কিন্তু, তাঁরা কথা রাখেননি। আদিলা এবং নুরাকে এর্নাকুলামে আদিলার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপরই, আদিলার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁদের উপর যারপরনাই মানসিক চাপ দেওয়া শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাঁদের একসঙ্গে ঘুমোতে দেওয়া হত না, পাছে তাঁরা শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হয়। আরও নানাবিধ হয়রানি শুরু হয়েছিল। তবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল ২৪ মে। তার আগের দিনই অর্থাৎ, ২৩ মে, ফতিমার বাবা-মা কালিকটের এক থানায় মেয়ের নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ২৪ মে, আদিলা ও ফতিমা থানায় হাজিরা দেওয়ার পর পুলিশ তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল। লেসবিয়ান যুগল আদিলার আত্মীয়ের বাড়িতে ফিরে এসেছিল। তবে এরপরই ফতিমার বাড়ির লোক সেই বাড়িতে হানা দিয়ে ফতিমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন আদিলা। সেই সময় আদিলার বাবাও আদিলাকে জোর করে ধরে রেখেছিলেন।


গত ২৭ মে, ‘বনজা কালেক্টিভ’ এবং আদিলা, ফতিমার পরিবারের বিরুদ্ধে কালিকটের থামরাসেরি থানায় গিয়েছিলেন। তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন ফতিমার উপর যৌন অত্যাচার করা হবে। কারণ, তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় এক আত্মীয়া বলেছিলেন ‘পুরুষের আদর পেলে, সমকাম ঘুচে যাবে’। কিন্তু, ‘বনজা কালেক্টিভ’ এবং আদিলা অভিযোগ করেছেন, থামরাসেরি থানার পুলিশ ঘটনাটি ‘পারিবারিক বিষয়’ বলে তাঁদের অভিযোগ নথিভুক্ত করেনি। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ফতিমার ফোন বন্ধ ছিল। গত ২৯ মে, আদিলা ফোনে ফতিমার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন। তবে পুরোটা সময় ফতিমার সামনে তাঁর মা এবং আলি নামে একজন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। ফোন দেওয়া ছিল লাউড স্পিকারে। ওই অবস্থাতেই ফতিমা ইঙ্গিতে আদিলাকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে রূপান্তর থেরাপিতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কোনও ব্যক্তির লিঙ্গ পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াকে বলে রূপান্তর থেরাপি। এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর আগে মাদ্রাজ হাইকোর্ট এই থেরাপিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছিল।

দেরি না করে একই দিনে ‘বনজা কালেক্টিভ’ এবং আদিলা কেরল হাইকোর্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দাখিল করেছিলেন। মঙ্গলবার, এই মামলার শুনানি হয়। এই কার্যক্রমে আদালত আদিলা ও ফতিমা ছাড়া অন্য কাউকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেয়নি। পরে ওই লেসবিয়ান যুগল জানিয়েছেন, মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিট চলে আদালতের কার্যক্রম। তাঁরা একসঙ্গে থাকতে চান কি না, জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তাঁরা সম্মতি জানাতেই শুনানি শেষ হয়ে যায়। আদালত তাঁদের একসঙ্গে থাকার অনুমতি দেয়।

Next Article