কোল্লাম: কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে নিজের স্ত্রীকে খুন (Murder) করার উদাহরণ রয়েছে ভুরি ভুরি। কখনও সম্পত্তির লোভ, কখনও পণের দাবিতে আজও প্রতিনিয়ত অনেক মেয়েকেই খুন হতে হয়। তাই স্ত্রী’কে খুনের ঘটনা বিরল বলা যায় না। কিন্তু কেরলের (Kerala) একটি ঘটনাকে বিরলের মধ্যে বিরলতম (Rarest of the Rare) বলে আখ্যা দিল পুলিশ। একবার নয়, পরপর দুবার নিজের স্ত্রীকে সাপের ছোবল (Snake Bite) খাইয়ে মারার চেষ্টা করে স্বামী। প্রথমবার সফল হয়নি, কিন্তু পরের বার কোবরার ছোবল শেষ করে তার স্ত্রীকে। এমন খুনে অপরাধীকে ধরা বেশ কঠিন ছিল। সাপের ছোবল খাইয়ে স্বামীই যে খুন করেছে, তা বোঝা দুষ্কর ছিল। শেষ পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে আসল সত্যিটা। আদালতে অপরাধী প্রমাণিত হয়েছেন সূরজ নামের ওই ব্যক্তি।
২৫ বছর বয়সী স্ত্রী উথরাকে খুন অভিনব কায়দায় খুন করে সূরয। সেই মামলায় আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির চারটি ধারায় অপরাধ প্রমাণ করা হয়েছে সূরযের বিরুদ্ধে।
২০২০ সালের ৭ মে উথরা নামে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়। সাপের ছোবলে মৃত্যু হয় তাঁর। তবে এটাই প্রথমবার নয়, এর আগে ২০২০ সালেও একবার একই কায়দায় খুন করার চেষ্টা হয়েছিল উথরাকে। মার্চ মাসেও তাঁকে সাপে কামড়েছিল। প্রথমবার সাপের কামড় খেয়ে অসুস্থ হলেও প্রাণে বেঁচে যান তিনি। হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভর্তি থাকতে হয় উথরাকে। দীর্ঘ ৫২ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। এই সময় তাঁর প্লাস্টিক সার্জারিও করাতে হয়। প্রথমবার একটি ভাইপার সাপ কামড়েছিল। আর তাতে অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। পরে মে মাসে আরও বিষধর কোবরার কামড়। উথরাকে এরপর আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিক ভাবে অনেকেই বিষয়টিকে দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখেছিলেন। তবে সন্দেহ হয়েছিল উথরার পরিবারের। বিশেষত তাঁর বাবা আর ভাই উথরার স্বামীকেই সন্দেহ করছিল। তাঁরা পুলিশে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে উথরার মৃত্যুর বিষয় আদতে অনেকদিন ধরেই পরিকল্পনা করছিল এই সূরয। সেই কারণে পরপর দুবার সাপও ভাড়া নেয় সে। সুরেশ নামে এক ব্যক্তি তাঁকে সাপ ভাড়া দিত। প্রথম ছোবলের পর উথরার শরীর ভেঙে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতিতেই আরও বিষধর সাপের ছোবল খাওয়াতেই নিজের স্ত্রীকে খুন করা সহজ হয় সূরযের। মূলত সম্পত্তির লোভেই এই কাজ করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ধরা পড়ার পর সূরয কোনও সময়ই অনুতাপ দেখায়নি এই খুনের বিষয়ে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (হত্যা), ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা), ৩২৭ (সম্পত্তি আত্মসাত করতে আঘাত) এবং ২০১ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কোল্লাম জেলার অতিরিক্ত দায়রা আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাকে। কেরলের ডিজিপি আদালতের নির্দেশে খুশি। তিনি জানান, এটি একটি বিরলতম ঘটনা, যেকানে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কতটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে খুনের তদন্ত করা হয়, এটা তারই উদাহরণ।