রক্ষিত সোনাওয়ানে
মুম্বই : সম্প্রতি মুম্বইয়ের এক মারাঠি টিভি সিরিয়ালের অভিনেতা কেতকী চিতালেকে গ্রেফতার করেছে থানে পুলিশের অন্তর্গত অপরাধ শাখা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এনসিপি নেতার সম্বন্ধে একটি বিতর্কিত পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। যা বর্ষীয়ান এই নেতার জন্য মানহানিকর। পোস্টটি এক আইনজীবীর লেখা। যেখানে নাম উদ্ধৃত না করে তাঁকে ব্রাহ্মণ বিরোধী বলা হয়েছে। এবং তাঁর শারীরিক অবস্থাকে তাঁর অপকর্মের ফল হিসেবে দাবি করা হয়েছে ওই পোস্টে। সেই পোস্টটি শেয়ার করেন কেতকী চিতালে। এর থেকেই শুরু হয় বিতর্কের সূত্রপাত। তবে তাঁর বিতর্কে জড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বহু বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল এই অভিনেত্রীর। একাধিকবার মামলাও দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এইবারের তাঁর গ্রেফতারির মধ্যে একটি ট্রেন্ড অনুসরণ করা হয়েছে।
সরকারি নীতি বা সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করলে পুলিশ দিয়ে সেই কণ্ঠস্বর রোধের ছবি আগেও দেখা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এহেন পদক্ষেপ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেই করতে দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি নির্দল সাংসদ নবনীত রানা ও তাঁর বিধায়ক রবি রানার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা করা হয়। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বাসভবন মাতোশ্রীর সামনে হনুমান চল্লিশা পাঠ করার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা করার ক্ষেত্রে সুপ্রিম নিষেধাজ্ঞা থাকায় রেহাই মিলেছে এক্ষেত্রে। কেতকী চিতালের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০, ৫০১, ৩০৫ ও ১৫৩ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
এদিকে যে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন জোট সরকার (শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস) বহুবার কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহাররে অভিযোগ তুলেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। মহা বিকাশ আঘাড়ি (MVA) জোটের একাধিক নেতার বাড়িতে কেন্দ্রীয় সংস্থা অভিযান চালিয়েছে। চলতি বছরেই প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মন্ত্রী নবাব মালিক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। যখনই রাজ্যের শাসক জোটের কোনও নেতা বা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে এমভিএ জোট বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিজেদের রাজনৈতিক কারণে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। এবার সেই অভিযোগ বুমেরাং হয়ে তাদের দিকেই ফিরে এল। কেতকীর গ্রেফতার সহ একাধিক মামলায় বিজেপির মতো অনুরূপ পদক্ষেপ করল এমভিএ সরকারও। এমভিএ বিজেপির মতো সরকারের সমালোচকদের পুলিশ দেখিয়ে কণ্ঠরোধ করেছে। এক্ষেত্রে কঙ্গনা রানাওয়াত বড় উদাহরণ হতে পারে। যখন কঙ্গনা রানাওয়াত উদ্ধব ঠাকরের সরকারের সমোলোচনা করেছিলেন, বিরহানমুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (BMC)এর আধিকারিকরা তাঁর বাসভবনে গিয়ে তাঁকে অবৈধ কাঠামো ও নির্মাণের জন্য নোটিস দিয়ে আসেন। এবং রানা দম্পতির ক্ষেত্রেও এই একই ছবি দেখা গিয়েছিল। উল্লেখ্য, এই বিএমসি-তে ক্ষমতায় রয়েছে শিবসেনা। যাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে হেনস্থা করার তারা নিজেরাই সেই পথে হাঁটেন। তবে কেতকীর মতো ছোটো খেলোয়াড়রা শিকার হন রাজ্যের এই বিষাক্ত রাজনীতির।