ভুবনেশ্বর: লুপ লাইনে দাঁড়িয়েছিল মালগাড়ি (Goods Train)। পাশেই মেইন আপ লাইনে সেই সময়ে হাওড়া থেকে চেন্নাইয়ের দিকে যাচ্ছিল দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের অন্যতম জনপ্রিয় ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express)। সেই সময়ে ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২৮ কিলোমিটার। রেলের গতিপথ ঠিক করার পয়েন্টে ছোট্ট একটা ভুল, আর তাতেই ঘটে গেল বিপর্যয়। ভুল লাইনে ঢুকে পড়ল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সোজা গিয়ে ধাক্কা মারল লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে। সংঘর্ষের জেরে লাইনচ্যুত হয়ে যায় করমণ্ডলের ২১টি কামরা। পাশের ডাউন লাইনে সেই সময় হাওড়ার দিকে আসছিল যশবন্তপুর এক্সপ্রেস। লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরার সঙ্গে অভিঘাত এড়াতেই ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেন যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের চালক। আকস্মিক ব্রেকের কারণে ছিটকে পড়ে যায় ওই ট্রেনের ৩টি কামরাও। দুর্ঘটনার পর দেড়দিন কেটে গিয়েছে। দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৩০০ যাত্রীর দেহ। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে কমপক্ষে ৯০০ যাত্রীকে। মৃতের সংখ্য়া বাড়তে পারে আরও। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস ও মালগাড়ির চালক ও গার্ডরা। অর্থাৎ যে তিনটি ট্রেনের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটল, তাদের চালকরা রক্ষা পেয়েছেন। কেউ অল্প আহত হয়েছেন, কেউ আবার সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছেন। দুর্ঘটনার মুহূর্তে ঠিক কী হয়েছিল, তাও জানা গেল তাঁদের মুখ থেকেই।
জানা গিয়েছে, চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক ছিলেন জেএন মোহান্তি। তাঁর সহকারী চালক ছিলেন এইচ বেহেরা। দুর্ঘটনায় তাঁরা দুইজনই আহত হয়েছেন। বর্তমানে কটকের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁরা। অন্য়দিকে, বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের চালক ছিলেন সিআর রথ, সহ-চালক ছিলেন সুধীর কুমার। দুর্ঘটনায় তাঁরা দুইজনই অক্ষত রয়েছেন। মালগাড়ির পিছন দিকে ধাক্কা মারায়, চোট লাগেনি সেই ট্রেনের চালক ও গার্ডেরও।
করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক ও সহচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও, যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের চালক সিআর রথ বলেন, “আমরা ডাউন লাইনে ছিলাম। উল্টোদিকে মেইন লাইন থেকে আসছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১৬ কিমি। দুটি ট্রেন একে অপরকে পার করে, তখন কিছু হয়নি। তারপরই হঠাৎ কিছু একটা হয়। শেষের তিনটি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে যায়। আমি ইঞ্জিনে থাকায়, পিছনে কী হয়েছে তা জানি না।”
অন্য়দিকে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের খড়্গপুর ডিভিশনের কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজেশ কুমার বলেন, “ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লোকো পাইলট, সহকারী লোকো পাইলট ও গার্ডের চিকিৎসা চলছে। দুর্ঘটনা কী ভাবে ঘটেছে, সেটা তদন্তের পরই জানা যাবে।”