পুনে: রামায়ণ, মহাভারত কেবল মহাকাব্য নয়, কূটনীতির অন্যতম উদাহরণ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং হনুমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় কূটনীতিবিদ। শনিবার পুনেতে নিজের ইংরেজি বই প্রকাশনী অনুষ্ঠানে এসে এমনই মন্তব্য করলেন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং হনুমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় কূটনীতিবিদ। যদি আমরা হনুমানের দিকে তাকাই, তিনি কূটনীতির ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিলেন, তাঁর লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান, সীতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং লঙ্কায় আগুন ধরিয়ে দেন।” অপরদিকে, শ্রীকৃষ্ণের কূটনীতিবিদের উদাহরণ হিসাবে শিশুপালের শত দোষ খণ্ডন এবং ১০১ দোষ করতেই তাঁকে হত্যা করা থেকে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বিভিন্ন মুহূর্ত তুলে ধরেন। দেশ পরিচালনার জন্য এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে পদক্ষেপের ব্যাপারে কূটনীতি যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তার উল্লেখ করেন বিদেশমন্ত্রী।
পাকিস্তানের পাশাপাশি বর্তমানে চিন ভারতের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রতিবেশী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক গণ্ডি দেখার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন এস. জয়শঙ্কর। এপ্রসঙ্গে মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের কূটনীতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “পাণ্ডবেরা আত্মীয়দের বেছে নেয়নি, আমরাও প্রতিবেশীদের বেছে নেব না। স্বাভাবিকভাবেই, প্রতিবেশী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভাল বুদ্ধি বিরাজ করবে বলেই আমরা আশা করছি।”
জঙ্গিদের মদত দেওয়ার জন্য বর্তমানে পাকিস্তানের জোটসঙ্গী খুবই কম। তুরস্কও তাদের সাহায্য করার মতো অবস্থায় নেই। এমনকি চিনও কখনও সাহায্য করবে না, কেবল ধার দিচ্ছে। এপ্রসঙ্গে করন এবং দুর্যোধনের উদাহরণ তুলে ধরেছেন জয়শঙ্কর।
একদিকে সীমান্তে চিনের আগ্রাসী মনোভাব, অন্যদিকে দক্ষিণ চিন সাগরে দাপট বাড়ানোর চেষ্টা- দু-দিক থেকেই ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে বেজিং। এই সময় গোটা পরিস্থিতি কৌশলগতভাবে পরিচালনা করা উচিত বলেই মনে করেন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। এপ্রসঙ্গে কুরুক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের যুধিষ্ঠিরকে দিয়ে দ্রৌণাচার্যকে ‘অশ্বথমা হত’ বলানোর উদাহরণও তুলে ধরেন বিদেশমন্ত্রী।
এদিন পুনেতে নিজের ইংরেজি বই ‘দ্য ইন্ডিয়া ওয়ে: স্ট্র্যাটেজিস ফর অ্যান আনসার্টেন ওয়ার্ল্ড’ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে এটির মারাঠি অনুবাদ ‘ভারত মার্গ’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। মূলত দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কূটনীতি যে প্রধান অস্ত্র এবং অবশ্যম্ভাবী বিশ্বে ভারতের কৌশল কী, তা নিয়েই বইটিতে আলোচনা করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর। তিনি যে দেশের দুই মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের অন্যতম দুই কূটনীতিবিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করেন, তা এদিন বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যেই স্পষ্ট।
যে কোনও ক্ষেত্রে কূটনীতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে যেমন দাবি জানান, তেমনই কূটনীতি প্রয়োগের সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন এস. জয়শঙ্কর। বিদেশমন্ত্রী হওয়ার আগে বিদেশসচিব ছিলেন তিনি। তার উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, “বিদেশসচিব হওয়া আমার লক্ষ্য ছিল, কখনও মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত নই যে, নরেন্দ্র মোদী ছাড়া অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী করতেন কিনা।”