‘বাড়িতে বৌ-এর দিকে তাকিয়ে বসে সময় নষ্ট করা থেকে অফিসে কাজ করুন।’ না এ কথা আমরা বলছি না। এই ধরনের মন্তব্য করেছেন একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান। লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান তাঁর সংস্থার কর্মীদের সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করতে বলেছেন। সে নিয়ে তোলপাড় চলছে। ওই শীর্ষকর্তা কর্মীদের বলেছেন, বাড়িতে থেকে কী হবে? কতক্ষণ স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? তার চেয়ে অফিসের কাজ করুন। কোম্পানির ভাল। আপনারও ভালো। সেই থেকে ওই ভদ্রলোক এসএন সুব্রহ্মণ্যমের মুণ্ডুপাত হচ্ছে।
সুব্রহ্মণ্যম গত বছর ৫১ কোটি টাকার বেশি বেতন পেয়েছেন। সেটা নিয়েও লাখ-লাখ নেটিজেনের কটাক্ষ। এর মধ্যে সোশাল ইনফ্লুয়েন্সার অক্ষত শ্রীবাস্তবের একটা মন্তব্য চোখে পড়ল। মন্তব্যটা সুব্রহ্মণ্যমকে নিয়ে নয়, সমালোচকদের নিয়ে। অক্ষত লিখেছেন, বেচারা সুব্রহ্মণ্যম। সরকার ওকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। জনগণ ওকে শান্তিতে বসতেও দিচ্ছে না। সুব্রহ্মণ্যমকে বছরে ১৬ কোটি টাকা আয়কর দিতে হয়েছে। এত টাকা ট্যাক্স দিতে হলে কার মাথার ঠিক থাকে বলুন ! অক্ষত লিখেছেন , প্রিয় করদাতা, আপনিও এই করের জ্বালায় জ্বলছেন। বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করছেন। ছেলেমেয়েকে বকাঝকা করছেন। অধঃস্তন কর্মীদের ঝাড়ছেন। খালি অর্থমন্ত্রীকে কিছু বলে উঠতে পারছেন না। অক্ষত ভুল কিছু বলছেন কী?
বাজেটের আগে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বণিকসভার প্রতিনিধিরা। সিআইআই, আইসিসি, পাঞ্জাব চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের মতো সংগঠন এক সুরে জানিয়েছে, করের ভারে মধ্যবিত্তের কোমর ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। ২০ লাখ বা তার কম আয়ের করদাতাদের উপর ভার কমাতে হবে। জিএসটির খোলনোলচে বদলাতে হবে। পপকর্নের উপর তিন ধরণের জিএসটি – এই কখনও কাঙ্খিত রেজাল্ট দিতে পারে না। বণিকসভার বক্তব্য, এফএমজিসি সেক্টরে মন্দা স্পষ্ট। লোকের হাতে টাকা নেই। খরচ করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। মধ্যবিত্তরা দূর্বল হলে, অর্থনীতির ভিতটাই নড়ে যাবে।
ইনফোসিসের প্রাক্তন সিএফও মোহনদাস পাইয়ের বক্তব্য, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে বছরে ৯ লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকি খাতে খরচ করে। এর ২ শতাংশও সরাসরি মধ্যবিত্তের ভাগ্যে জোটে না। অথচ আয়কর ও জিএসটির ৭০ শতাংশ মধ্যবিত্তদের ঘাড়ে ধরে আদায় করা হচ্ছে। কেন? মধ্যবিত্তদের ঘাড় ধরে টাকা নেওয়া সহজ বলে! একেবারে ১০০ শতাংশ খাঁটি কথা। আমরা যারা ফিক্সড স্যালারির উপর নির্ভরশীল, তাদের তো নাভিশ্বাস ওঠার মতো অবস্থা।
গত জুনে বাজেটের সময় দেখা গেল, আমরা আয়কর বাদে বছরে ৩০ হাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকার কর দিচ্ছি। এর প্রায় ৭০ শতাংশ যাচ্ছে জিএসটির বোঝা টানতে। বাকিটা অন্যান্য খাতে। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন উপলক্ষ্যে আপনাকে- আমাকে ১৭ রকমের কর দিতে হয়। আপনি রোজগার করুন, বা নাই করুন। আপনি মাসে ৮ হাজার টাকা আয় করুন বা ৮ লাখ টাকা – কর কিন্তু একই। ‘