জবলপুর: তাঁর জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানে। এখন বয়স ৭৭। রোগী দেখা শুরু করেছিলেন মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে, বর্তমানে তাঁর পারিশ্রমিক ২০ টাকা। ৭১-এর যুদ্ধের সময় এক বছর সেনাবাহিনীতেও ছিলেন। রাজনৈতিক কোনও যোগাযোগ কোনও কালে ছিল না। এমনই ব্যতিক্রমী চিকিৎসক, ডা. এমসি দাওয়ারকে চলতি বছরে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করল কেন্দ্রীয় সরকার। এই সম্মান পাওয়ার পর, ডাক্তারবাবু বলেছেন, “দেরিতে হলেও, কোনও কোনও সময় কঠিন পরিশ্রমের ফল পাওয়া যায়। এই পুরস্কার কঠিন পরিশ্রমেরই ফল। মানুষের আশীর্বাদেই আমি এই পুরস্কার পেলাম।”
বুধবার সন্ধ্যায় এই বছরের পদ্ম পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোট ৬ জন পাচ্ছেন পদ্মবিভূষণ পুরস্কার। ৯ জন পদ্মভূষণ এবং আরও ৯১ জনকে দেওয়া হয়েছে পদ্মশ্রী সম্মান। তাঁদেরই একজন ডা. এমসি দাওয়ার। ১৯৪৬ সালের ১৬ জানুয়ারি পাক পঞ্জাব প্রদেশে জন্ম হয়েছিল তাঁর। দেশভাগের পর, সপরিবারে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। ১৯৬৭ সালে মধ্য প্রদেশের জবলপুর থেকে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। এর চার বছর পরই, ১৯৭১ সালে শুরু হয়েছিল ভারত-পাক যুদ্ধ। সেই সময়, প্রায় ১ বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে পরিষেবা দেন তিনি।
সেনাবাহিনীতে পরিষেবা দেওয়ার পর, ১৯৭২ সালে জবলপুরে চিকিৎসা করা শুরু করেন তিনি। মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে তিনি চিকিৎসা করা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তাঁর পারিশ্রমিক বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু খুব বেশি নয়, ২০ টাকা। এই বিষয়ে ডা. এমসি দাওয়ার বলেছেন, “এত কম পারিশ্রমিক নেওয়া নিয়ে বাড়িতে আলোচনা হয়েছে ঠিকই, তবে এই নিয়ে কোনও মতবিরোধ ছিল না। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য জনগণের সেবা করা, তাই পারিশ্রমিক বাড়ানো হয়নি। সাফল্যের মূল মন্ত্র হল, আপনি যদি ধৈর্য ধরে কাজ করেন তবে অবশ্যই সাফল্য পাবেন। সাফল্যও এক ধরনের সম্মান।”
তাঁর পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্তিতে দারুণ খুশি তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। ডা. দাওয়ারের ছেলে ঋষি বলেছেন, “আমরা ভাবতাম রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকলে তবেই পুরস্কার পাওয়া যায়। কিন্তু, যারা সত্যিকারের কাজ করছেন, সরকার যেভাবে তাঁদের খুঁজে খুঁজে সম্মান জানাচ্ছেন, তা সত্যিই খুব ভাল বিষয়। এই কারণেই বাবা এই পুরস্কার পেয়েছেন।” ডা. দাওয়ারের পুত্রবধু সুচিতা বলেছেন, “এটা আমাদের, আমাদের পরিবারের, আমাদের শহরের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।”