মুম্বই:
সহজেই সেমিফাইনালটা জিতে নিলেন একনাথ শিন্ডে। সোমবারই, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আস্থাভোটে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। তার এক দিন আগে, রবিবার (৩ জুলাই) বড় জয় পেল শিন্ডের শিবির। সহজেই ভোটে জিতে মহারাষ্ট্র বিধানসভার নতুন স্পিকার হলেন এনডিএ প্রার্থী তথা বিজেপির তরুণ বিধায়ক রাহুল নারবেকর। নারওয়েকার পেলেন ১৬৪ ভোট। আর মহা বিকাশ আগাড়ি জোটের প্রার্থী তথা শিবসেনা বিধায়ক রাজন সালভির পক্ষে পড়ল মাত্র ১০৭টি ভোট। ফলে, ৪৫ বছর বয়সী নারওয়েকার, প্রথমবার বিধায়ক হয়েই বসলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বা স্পিকার পদে। এই জয়, সোমবারের আস্থা ভোটের জন্য তো বটেই, একনাথ শিন্ডে সরকারের টিকে থাকার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা নানা পাটোলেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষ নির্বাচিত করেছিল মহা বিকাশ আগাড়ি জোট। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার জন্য অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন নানা পাটোলে। সেই থেকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধ্যক্ষের পদটি ফাঁকা ছিল। এতদিন, ভারপ্রাপ্ত স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডেপুটি স্পিকার নরহরি জিরওয়াল। গত ডিসেম্বরে বিধানসভার স্পিকার নির্বাচন করতে চেয়ে রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারিকে চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু, ভোটদানের নিয়ম সংশোধন করার কারণ দেখিয়ে ওই নির্বাচন অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। স্পিকার নির্বাচনের অনুমতি দেননি। উদ্ধব ঠাকরের চিঠির ভাষা ‘অসংযত’ ছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন ভগত সিং কোশিয়ারি।
এরপর, চলতি বছরের ১৬ মার্চ স্পিকারের নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছিল উদ্ধব ঠাকরে সরকার। কিন্তু, ফের রাজ্যপালের কার্যালয় থেকে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জানানো হয়, স্পিকার নির্বাচনে গোপন ব্যালটের পরিবর্তে যে ধ্বনি ভোটের প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, সেই সংশোধনীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন বিজেপি বিধায়ক গিরিশ মহাজন। বিষয়টি এখন বিচারাধীন, তাই ভোটগ্রহণ করা যাবে না। তবে, একনাথ শিন্ডের সরকার শপথ নেওয়ার পর, রাজ্যপাল আর অধ্যক্ষ নির্বাচন নিয়ে আপত্তি তোলেননি। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই পদে বসলেন বিজেপি প্রার্থী। এদিনের নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির দুই বিধায়ক আবু আজমি ও রইস শেখ এবং এবং একমাত্র এআইমিম বিধায়ক শাহ ফারুক আনোয়ার ভোট দেননি। বাকি সকল বিধায়কই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালা বদলের প্রেক্ষিতে এই নির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে-সহ যে ১৬ জন বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার নোটিস জারি করেছিলেন ডেপুটি স্পিকার নরহরি জিরওয়াল। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়া স্পিকার রাহুল নারবেকর, তাঁর ক্ষমতাবলে সেই প্রক্রিয়া খারিজ করতে পারেন। এছাড়া, রয়েছে কারা আসল শিবসেনা, সেই প্রশ্ন। শুক্রবার, ‘দলবিরোধী কার্যকলাপের’ জন্য, একনাথ শিন্ডেকে দলীয় নেতার পদ থেকে বহিষ্কার করেছেন উদ্ধব ঠাকরে। তবে, শিন্দে গোষ্ঠী সাফ জানিয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবে। তারাই এখন শিবসেনা। শিন্ডের দাবি, তাঁর সঙ্গে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দলীয় বিধায়করা আছেন। কাজেই তিনিই শিবসেনার পরিষদীয় দলনেতা। স্পিকার রাহুল নারবেকর, শিন্দে শিবিরকে ‘আসল’ শিবসেনা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারেন।