নয়া দিল্লি : একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে দিল্লি সফরে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। এদিন দলীয় সাংসদদের সঙ্গে সেই নিয়ে একপ্রস্থ বৈঠকও করেছেন মমতা। শনিবার আবার বিজেপি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি। সূত্র মারফত এমনই জানা গিয়েছে। চার অবিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। সেই তালিকায় রয়েছে উত্তর ভারতের দুই রাজ্য এবং দক্ষিণের দুই রাজ্য। কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়েই আলাদা ভাবে এই চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তিনি। দিল্লি রাজনীতির অন্দরমহলে কান পাতলেই এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এদিকে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে আলাদাভাবে মমতা বৈঠক করতে পারেন বলেও কানাঘুষো ছড়িয়েছে দিল্লির রাজনীতিতে। সনিয়ার সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক অথচ অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে কংগ্রেস বাদ? এমন কেন?
জাতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রতিক অতীতের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধীদের প্রার্থী কে হবেন, তা স্থির করার জন্য দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা যশোবন্ত সিনহাকে বেছে নেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিরোধী মুখ হিসেবে। কিন্তু এরপর, রথযাত্রার এক অনুষ্ঠানে মমতার এক মন্তব্য থেকেই তাল কাটল। দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি সুর নরম করলেন মমতা। বিরোধী ঐক্য আবারও কেমন টলমল হয়ে উঠল।
এরপর উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিষয়টি যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য বিরোধীদের বৈঠকের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত যে মার্গারেট আলভাকে বেছে নেওয়া হয়, তিনিও কংগ্রেস ঘরানার। সেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে তৃণমূল। তারপর আবার এই বার দিল্লি সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করছেন মমতা।
এমন পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই চার অবিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মমতা। অন্তত সূত্র মারফত এমনই জানা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি কংগ্রেসের সঙ্গে আরও দূরত্ব বাড়াতে চলেছেন মমতা? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জল মাপতে চাইছেন মমতা। কংগ্রেস ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে, সেই বিষয়টি আরও একবার বুঝে নিতে চাইছেন মমতা। বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলি যে জাতীয় রাজনীতিতে কতটা শক্তিধর, তারও একটি আভাস দিতে চাইছেন মমতা। যেমন, সামনেই তেলাঙ্গানায় নির্বাচন রয়েছে। সেখানে বিজেপিকে আটকানোর জন্য লড়াই করছেন কে চন্দ্রশেখর রাও। আবার ডেএমকে-ও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আম আদমি পার্টি এখন দিল্লি ছাপিয়ে পঞ্জাবেও শুধু শক্তি বিস্তারই করেনি, তখতও দখল করেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলির ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করছেন মমতা?
রাজনীতিতে টানাপোড়েন যেমনই থাকুক না কেন, মমতা-সনিয়ার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবরই ভাল। এর আগেও একাধিকবার দিল্লিতে গিয়ে সনিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌজন্য বিনিময় করেছেন। দলগতভাবে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে সম্পর্ক যেমনই থাক, ব্যক্তিগত স্তরে মমতা বা সনিয়া কেউই নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরতে দেননি। সেই জায়গা থেকেই এবারও সনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেন মমতা। অন্তত এমনই মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু সনিয়ার সঙ্গে দেখা করলে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে বিজেপি। তাই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে অবিজেপি চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেই ভারসাম্য টানার চেষ্টা বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের।
তবে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া মমতার এক কৌশলী চাল বলেও মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। এর আগে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, যার যেখানে ক্ষমতা রয়েছে, সে সেখানে লড়বে। সে ক্ষেত্রে রাজনীতির সমীকরণ কী হবে, তা ভোট পরবর্তী ক্ষেত্রে স্থির করার সুযোগ থাকবে মমতা এবং অন্যান্য বিজেপি বিরোধী দলগুলির কাছে। তাছাড়া, বাম কিংবা কংগ্রেসের সঙ্গে এখন থেকে ২০২৪-এর ভোটকে লক্ষ্য করে আলোচনায় বসতে গেলে বাংলায় দলের সাংগঠনিক শক্তির উপর প্রভাব পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ‘দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি’ এমন তত্ত্ব খাড়া করতে পারেন কেউ কেউ। আর এমন হলে আখেড়ে রাজনৈতিক ফায়দা যে বিজেপির দিকেই যাবে বলে মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। তাহলে কি সেই কারণেই সুকৌশলে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন মমতা? এমন প্রশ্ন কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।