শ্রীনগর: এলাকার সবাই জানতেন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তা তিনি। আসেন দামি গাড়ি চড়ে। সঙ্গে থাকে হাতে বন্দুক নিরাপত্তারক্ষী। বড় আধিকারিক ভেবে ভয়ে তাঁর ধারে-কাছে যেতেন না। ১০ দিন আগে হঠাৎ পুলিশ এসে সেই “বড় কর্তা”কে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতেই সংশয় তৈরি হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। শেষে তাঁর পরিচয় জানতে পেরে মাথায় হাত সকলের। কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক তিনি, এই ভুয়ো পরিচয়েই দীর্ঘদিন ধরে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছিলেন এক ব্যক্তি। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন সেই ব্যক্তি। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে কিরণ ভাই পটেল নামক এক ব্য়ক্তিকে গ্রেফতার করা হয় সম্প্রতি। জানা গিয়েছে, তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তা বলেই পরিচয় দিতেন। ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে বুলেটপ্রুফ গাড়ি, যাবতীয় সুবিধাই নিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এমনকী, উপত্যকায় একাধিক শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে বৈঠকও করেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কিরণ ভাই পটেল নামক ওই ব্যক্তি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর বলে পরিচয় দিতেন। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে তিনি জম্মু-কাশ্মীরে বসবাস করছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তা পরিচয় দিয়েই তিনি নিজের জন্য জেড প্লাস নিরাপত্তার ব্য়বস্থা করেছিলেন। নিজে ব্যবহার করতেন বুলেটপ্রুফ স্করপিও গাড়ি। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজে এসেছেন, এই মিথ্যা বলেই নামি-দামি পাঁচতারা হোটেলেও থাকতেন। এমনকী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে বোকা বানিয়ে উরির কামান পোস্ট, যা নিয়ন্ত্রণ রেখার একদম পাশেই অবস্থিত, সেখানেও ঘুরে এসেছিলেন।
জানা গিয়েছে, ওই ব্য়ক্তি গুজরাটের বাসিন্দা। এক বছর আগে তিনি জম্মু-কাশ্মীরে বসবাস করতে শুরু করেন। ১০ দিন আগে তাঁকে গ্রেফতার করে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। তবে প্রথমে এই গ্রেফতারির তথ্য গোপন রাখা হয়। যাবতীয় নথি ও তথ্য় যাচাই করার পর বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয় অভিযুক্তকে। তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফজতে পাঠানো হয়েছে। এরপরই গোটা বিষয়টি সামনে আসে। তবে পুলিশে কবে এফআইআর দায়ের হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনও তথ্য় জানা যায়নি।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতেই জম্মু-কাশ্মীরের শীর্ষস্থানীয় দুই প্রশাসনিক আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন অভিযুক্ত। শ্রীনগরের লাল চক থেকে শুরু করে উরির বিভিন্ন পোস্টেও ঘুরে বেড়িয়েছিলেন ওই ব্য়ক্তি। ভুয়ো পরিচয় ব্য়বহারের পিছনে তাঁর কী উদ্দেশ্য ছিল, সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই মামলার তদন্তে পুলওয়ামা ডেপুটি কমিশনার বসির-উল হক ও পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট জ়ুলফিকর আজাদকে জেরা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গুজরাট পুলিশও এই মামলার তদন্তে যোগ দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।