ভোপাল: আবারও শ্রদ্ধাকাণ্ডের ছায়া। এবার ৫ বছরের লিভ ইন পার্টনারকে খুন করে বেডশিটে মুড়ে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিল প্রেমিক। ৬ মাস ধরে মৃতদেহ ছিল ফ্রিজে। টের পাননি কেউ। সম্প্রতিই পচা দুর্গন্ধ বেরোতেই সামনে আসে হাড়হিম করা ঘটনা।
ঘটনাটি ঘটেছে মধ্য প্রদেশের দেওয়াসে। বৃন্দাবন ধামের দোতলা বাড়িতে থাকতেন যুগল। বাড়ির মালিক ধীরেন্দ্র শ্রীবাস্তব। পেশায় ব্যবসায়ী ধীরেন্দ্র গত ছয় মাস ধরে দুবাইতে থাকেন। তাঁর বাড়ির একতলায় একদিকে একটি ঘর, একটি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর ও অন্যদিকে দুটি বেডরুম ও একটি হল। গত জুলাই মাসে বলবীর রাজপুত নামে এক ব্যক্তিকে সেই ঘর ভাড়া দেন ধীরেন্দ্র। তবে শর্ত ছিল একটাই, বলবীর ও তাঁর পরিবার ২টি বেডরুম ও ফ্রিজ ব্যবহার করতে পারবেন না।
বলা হয়েছিল, বলবীরের আগে এই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সঞ্জয় পাটিদার নামক এক ব্যক্তি। তিনি বলেছিলেন যে কিছুদিন পর এই দুটি ঘর ও ফ্রিজ খালি করে দেবেন। তবে বারবারই ঘর খালি করার সময় পেছতে থাকেন সঞ্জয় পাটিদার।
জুলাই মাস থেকে ভাড়ায় আসার পর ২টি বেডরুম ব্যবহার করতে না পেরে বলবীর ধীরেন্দ্রকে অনুরোধ করেন, ২টি বেডরুম খালি করার জন্য, ধীরেন্দ্র তাতে সম্মতি দেন। এরপর বলবীর গত বৃহস্পতিবার সেই ঘরের দরজার তালা ভাঙেন।
দরজা ভেঙে দেখেন, বন্ধ ঘরে ফ্রিজ চলছে। এতে বিরক্ত হন বলবীর। ভাবেন যে পূর্বতন ভাড়াটে কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন! বুঝতে পারেন, কেন এতটাকা ইলেকট্রিসিটি বিল আসছে গত কয়েক মাসে! এরপর ফ্রিজের সুইচ বন্ধ করেন বলবীর। ঘর পরিষ্কার করে বেরিয়ে যান।
গত শুক্রবার থেকে বিকট গন্ধ বেরিয়ে আসতে থাকে ঘর থেকে, গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের এলাকায়। গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবেশীরা থানায় অভিযোগ করেন। এরপর পুলিশ এসে ফ্রিজ খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ। দেখেন, ফ্রিজের মধ্যে বেডশিটে মোড়া এক মৃতদেহ!
জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। এরপর খোঁজ মেলে সঞ্জয় পাটিদারের। প্রতিবেশীরা জানান, এক মহিলার সঙ্গে এই বাড়িতে থাকত সঞ্জয় পাটিদার। তবে গত মার্চ মাস থেকে দেখা মেলেনি মহিলা, সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসা করলে, সে বলত তাঁর সঙ্গিনী বাবা মায়ের বাড়িতে গিয়েছেন। পুলিশ গ্রেফতার করে সঞ্জয়কে।
জেরায় সঞ্জয় জানায়, ৫ বছর ধরে প্রতিভা প্রজাপতি ওরফের পিঙ্কির সঙ্গে লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন। তার মধ্যে ৩বছর তাঁরা ছিল উজ্জয়নে। জেরায় সঞ্জয় জানায়, সে বিবাহিত। তাঁর ২ সন্তান রয়েছে। এরই মাঝে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল প্রতিভা। কিন্তু সে বিয়ে করতে অপারগ ছিল। পরিস্থিতি চরমে পৌঁছয় একদিন। যেদিন প্রতিভাকে সে খুন করে।
ঘটনার দিন তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের কথা বলে সঞ্জয়। মানতে নারাজ ছিল প্রতিভা। সে বিয়ের জন্য আবারও চাপ দিতে থাকে। তখনই প্রতিভাকে খুন করে সঞ্জয় পাটিদার। তবে প্রতিভার দেহ একা বেডশিটে মুড়ে ফ্রিজে ঢোকায়নি সে। বন্ধু বিনোদ দাভেকে ডাকে সঞ্জয়, দুজনে মিলে ফ্রিজে দেহ ঢুকিয়ে চালিয়ে দেয় সেটা। তারপর বন্ধ করে দেয় দরজা। বিনোদের খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, অন্য একটি অপরাধে রাজস্থানে জেলে বন্দি বিনোদ।
রাজস্থান পুলিশের সঙ্গে কথা বলছে মধ্য প্রদেশের পুলিশ। সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, প্রতি ১৫দিন অন্তর সে আসত ওই বাড়িতে, দেখতে প্রতিভা দেহের অবস্থা কেমন। সে ২ মাসের ভাড়াও দিয়েছিল। আর ধীরেন্দ্রকে বলেছিল, প্রতিভার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, তাই সেখানে বাবা মায়ের কাছে। সমস্যা মিটলেই আবার ফিরে আসবেন এই বাড়িতে।