নয়া দিল্লি: দেশেই রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পদ। এবার সেই সম্পদকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করল কেন্দ্রীয় সরকার। রবিবার (১৯ মার্চ) থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, ‘এনিমি প্রপার্টি’ বা ‘শত্রু সম্পত্তি’ উচ্ছেদ এবং বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করল। কী এই শত্রু সম্পদ? যাঁরা ভারত থেকে গিয়ে পাকিস্তান এবং চিনের নাগরিকত্ব নিয়েছে, তাদের রেখে যাওয়া স্থাবর সম্পত্তিকেই বলা হয় শত্রু সম্পত্তি। ভারতে এই ধরনের মোট ১২,৬১১ টি স্থাপনা রয়েছে। এই সকল শত্রু সম্পত্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কাস্টডিয়ান অব এনিমি প্রপার্টি ফর ইন্ডিয়া বা সিইপিআই (CEPI) নামে একটি এনিমি প্রপার্টি আইনের অধীনে তৈরি এক বিশেষ সংস্থা তৈরি করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, শত্রু সম্পত্তি নিষ্পত্তির নির্দেশিকা পরিবর্তন করা হয়েছে। এই সম্পত্তিগুলি বিক্রির সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসকের সহায়তায় উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
১ কোটি টাকার কম মূল্যের যে সকল শত্রু সম্পত্তি রয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে দখলদারদেরই প্রথমে ক্রয়ের প্রস্তাব দেওয়া হবে। সেই প্রস্তাব যদি দখলদাররা প্রত্যাখ্যান করে, তবে নির্দেশিকায় উল্লিখিত পদ্ধতি অনুসারে সেই সম্পত্তির নিষ্পত্তি করা হবে। এক কোটি টাকার বেশি এবং ১০০ কোটি টাকার কম মূল্যের শত্রু সম্পত্তিগুলি ই-নিলামের মাধ্যমে বা কেন্দ্রীয় সরকার এবং শত্রু সম্পত্তি নিষ্পত্তি কমিটির নির্ধারিত হারে বিক্রি করবে সিপিইআই। ই-নিলামের জন্য পাবলিক এন্টারপ্রাইজ এবং মেটাল স্ক্র্যাপ ট্রেড কর্পোরেশন লিমিটেডের ই-নিলাম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবে সিইপিআই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত শত্রু সম্পত্তির নিষ্পত্তি থেকে কেন্দ্রীয় সরকার ৩,৪০০ কোটি টাকারও বেশি আয় করেছে। যদিও তার সবই শেয়ার এবং সোনার মতো অস্থাবর সম্পদ। ১২,৬১১টি স্থাবর শত্রু সম্পত্তির একটিও এখনও পর্যন্ত বিক্রি করেনি মোদী সরকার। এবার এই সকল জাতীয় সম্পদ শনাক্ত করে সেগুলি বিক্রির জন্য, ২০টি রাজ্য এবং ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই শত্রু সম্পত্তিগুলির একটি জাতীয় সমীক্ষা শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ডিফেন্স এস্টেটস বা ডিজিডিই (DGDE) এই জাতীয় সমীক্ষা করবে। শত্রু সম্পত্তিগুলি বর্তমানে কী অবস্থায় আছে এবং তাদের কী মূল্য হতে পারে, তারাই নির্ধারণ করবে। সিইপিআই-এর কাছে যে ১২,৬১১টি সম্পত্তির তালিকা রয়েছে, তার মধ্যে, ১২,৪৮৫ টি ক্ষেত্রে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়েছেন ওই স্থাবর সম্পত্তিগুলির একসময়ের মালিকরা। আর বাকি ১২৬টি ক্ষেত্রে চিনের নাগরিকত্ব নেওয়া হয়েছে।
রাজ্য ভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী এই শত্রু সম্পত্তি সবথেকে বেশি রয়েছে উত্তরপ্রদেশে, ৬,২৫৫টি। তারপরে একে একে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (৪,০৮৮টি), দিল্লি (৬৫৯টি), গোয়া (২৯৫টি), মহারাষ্ট্র (২০৮টি), তেলঙ্গানা (১৫৮টি), গুজরাট (১৫১টি), ত্রিপুরা (১০৫টি), বিহার (৯৪টি), মধ্যপ্রদেশ (৯৪টি), ছত্তিশগড় (৭৮টি), হরিয়ানা (৭১টি), কেরল (৭১টি), উত্তরাখণ্ড (৬৯টি), তামিলনাড়ুতে (৬৭টি), মেঘালয় (৫৭টি), অসম (২৯টি), কর্ণাটক (২৪টি), রাজস্থান (২২টি), ঝাড়খন্ডে (১০টি), দমন ও দিউ (৪টি)। এছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ১টি করে শত্রু সম্পত্তি রয়েছে।