Mulayam Singh Yadav: কুস্তির আখড়া থেকে মুখ্যমন্ত্রী, থেমে গেল ছয় দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Oct 10, 2022 | 3:05 PM

Mulayam Singh Yadav: ছয় দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনে দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে নেতাজি-র সম্মান আদায় করে নিয়েছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব। তবে একসময় তিনি পরিচিত হয়েছিলেন মোল্লা মুলায়ম নামেও।

Mulayam Singh Yadav: কুস্তির আখড়া থেকে মুখ্যমন্ত্রী, থেমে গেল ছয় দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন
মুলায়ম সিং যাদব।

Follow Us

লখনউ: থেমে গিয়েছে ছয় দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। প্রয়াত উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ করে সমাজবাদী রাজনীতির পরিসরে বরাবর এক বিশিষ্ট স্থানে থাকবেন মুলায়ম। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে, সমাজবাদী পার্টির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সামলানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে এবং তিন মেয়াদে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দলীয় কর্মীদের কাছে বরাবর তিনি পরিচিত ছিলেন ‘নেতাজি’ হিসেবে।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৩৯ সালে উত্তর প্রদেশের ইটাওয়া জেলার সাইফাইয়ে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুলায়ম। বাবা ছিলেন সুঘর সিং, মা মূর্তি দেবী। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে বিএ, বিটি এবং এমএ ডিগ্রি লাভের পর তিনি উত্তরপ্রদেশের করহলে লেকচারার পদে কাজ করা শুরু করেছিলেন। তবে শীঘ্রই পুরো সময়ের জন্য রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন।

মুলায়ম সিং যাদবের প্রথম বিয়ে হয়েছিল মালতী দেবীর সঙ্গে। ১৯৭৩ সালে অখিলেশ যাদবের জন্ম হয়। সেই সময়ই প্রসব সংক্রান্ত জটিলতার কারণে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন মালতী দেবী। ওই অবস্থায় ২০০৩ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তিনি। তিনি বেঁচে থাকতেই ১৯৯০-এর দশকে সাধনা গুপ্তা নামে আরেক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। প্রথম বিয়ে থেকে সাধনা গুপ্তার প্রতীক যাদব নামে এক ছেলে ছিল। ২০০৭ সাল পর্যন্ত অবশ্য মুলায়মের দ্বিতীয় বিবাহর কথা কেউ জানত না। একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের মামলায়, সুপ্রিম কোর্টে মুলায়মকে এই বিয়ের কথা স্বীকার করতে হয়েছিল। ২০২১ সালে সাধনা গুপ্তার মৃত্যু হয়।

রাজনৈতিক জীবন

তবে ব্যক্তিগত জীবনের থেকে মুলায়ম সিং যাদবের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবন। ডক্টর রাম মনোহর লোহিয়ার সমাজবাদী নীতি ও মতাদর্শ তাঁকে দারুণ প্রভাবিত করেছিল। মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। জনেশ্বর মিশ্র, রাম সেবক যাদব, কার্পুরী ঠাকুরের মতো আরও অনেক বড় মাপের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে এসেছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে, শিকোহাবাদের এ.কে. কলেজের ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মুলায়ম। তার আগেই ১৯৬০ সালে জনতা দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। শোনা যায়, এক কুস্তির আখড়ায় তাঁকে আবিষ্কার করেছিলেন জনতা দলের বিধায়ক নাথু সিং। ১৯৬৭ সালে প্রথমবার উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ৮ বার তিনি বিধায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৭ সালে, প্রথমবারের মতো তিনি উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে জনতা দলের সভাপতিও নিযুক্ত হন।

১৯৮৫ সালে জনতা দল ভেঙে গিয়েছিল। চন্দ্র শেখর এবং সিপিআই-এর সঙ্গে জোট বেঁধে মুলায়ম সিং যাদব “ক্রান্তিকারি মোর্চা” চালু করেছিলেন। এই জোটের হয়েই ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথমবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৯০ সালের নভেম্বরে, কেন্দ্রে ভি.পি. সিং সরকারের পতন ঘটলে, চন্দ্র শেখরের জনতা দল (সমাজবাদী)-তে যোগ দেন মুলায়ম। কংগ্রেস এবং জনতা দলের সমর্থনে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদেই থেকে যান। ১৯৯১ সালে সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল কংগ্রেস। ওই বছর বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন মুলায়ম।

এরপর ১৯৯২ সালে, তিনি নিজের দল সমাজবাদী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৯৩ সালের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বহুজন সমাজ পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করে জয়লাভ করেছিল সপা। দ্বিতীয় মেয়াদে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। ১৯৯৫ সালের জুন পর্যন্ত ওই পদেই ছিলেন। এরপর কংগ্রেস এবং জনতা দল জোট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

১৯৯৬-এ উত্তর প্রদেশের মৈনপুরী লোকসভা কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন মুলায়ম। যুক্তফ্রন্ট জোট সরকারে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুই বছরের মধ্যে সেই সরকারের পতন ঘটেছিল। ১৯৯৮ সালে ফের সাংসদ নির্বাচিত হন মুলায়ম। এবার, সম্বল লোকসভা এলাকা থেকে। ১৯৯৯ সালে, অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের পতন ঘটলে উত্তরপ্রদেশের সম্বল এবং কনৌজ দুটি নির্বাচনী এলাকা থেকেই লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন মুলায়ম।

২০০৩ উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় ফিরেছিল সপা। ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী হন মুলায়ম সিং যাদব। ২০০৭-এ মায়াবতীর বিএসপির কাছে ক্ষমতা হারান। ২০১২ সালে সপা ফের ক্ষমতায় ফিরলেও, মুখ্যমন্ত্রী হননি মুলায়ম। চেয়ার ছেড়ে দেন ছেলে অখিলেশ যাদবকে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের আজমগড় এবং মৈনপুরী – দুই লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুই আসনেই জয়ী হন তিনি। পরে অবশ্য মৈনপুরী আসন থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৯ সালে আবার সেই মৈনপুরী থেকেই জয়ী হয়েছিলেন।

বিতর্ক

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মুলায়ম বারবার বিদ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন বিতর্কেও। প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল। তারপর তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিতে হয়েছিল। সেই সময় মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল। তাঁকে ডাকা হত “মোল্লা মুলায়ম” নামে। ২০১২ সালের দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা চলাকালীন, এক জনসভায় মুলায়ম সিং বলছিলেন “লড়কে, লড়কে হ্যায়…গলতি হো জাতি হ্যায়” (ছেলেরা ছেলেই…তাদের ভুল হয়ে যায়)। ২০১৪ সালে বাদাউন ধর্ষণ মামলার পরও মুলায়ম বলেছিলেন, ধর্ষণ সারা ভারতে ঘটে, কিন্তু সংবাদমাধ্যম শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশের ঘটনাগুলিই দেখায় তা প্রদর্শন করে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও তাঁর এই সব মন্তব্যের সমালোচনা হয়েছিল। ২০০৭ সালে মুলায়ম ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের মামলা করেছিল সিবিআই। ২০১৯-এ, সপরিবারে সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব।

Next Article