Mulayam Singh Yadav: কুস্তি, প্রাণঘাতী হামলা, গোপন বিয়ে – মুলায়মের জীবনের কিছু স্বল্প-জানা কাহিনি

Mulayam Singh Yadav: যৌবনে ছিলেন পেশাদার কুস্তিগীর, গোপনে করেছিলেন দ্বিতীয় বিয়ে - মুলায়ম সিং যাদবের জীবনে রয়েছে এরকমই অনেক অজানা, স্বল্প-জানা কাহিনি।

Mulayam Singh Yadav: কুস্তি, প্রাণঘাতী হামলা, গোপন বিয়ে - মুলায়মের জীবনের কিছু স্বল্প-জানা কাহিনি
মুলায়ম সিং যাদব (ফাইল চিত্র)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 10, 2022 | 11:31 AM

লখনউ: সোমবার (১০ অক্টোবর), শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব। উত্তর প্রদেশের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বয়সে হয়েছিল ৮২ বছর। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। গত ২২ অগস্ট তাঁকে গুরগাঁওয়ের মেদান্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে গত ২ অক্টোবর তাঁকে ওই হাসপাতালেরই আইসিইউ বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এই অবসরে জেনে নেওয়া যাক ‘নেতাজি’ সম্পর্কে অজানা, স্বল্প জানা কিছু চমকপ্রদ তথ্য –

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক

রাজনীতিতে আসার আগে, মুলায়ম সিং যাদব তাঁর পেশাদার জীবন শুরু করেছিলেন একজন শিক্ষক হিসেবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ, বিটি এবং এমএ ডিগ্রি লাভের পর তিনি উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরী জেলার করহলের জৈন ইন্টার কলেজে লেকচারার পদে কাজ করা শুরু করেছিলেন।

পেশাদার প্রশিক্ষিত কুস্তিগীর

পাশাপাশি যৌবনে মুলায়ম সিং যাদব ছিলেন একজন পেশাদার প্রশিক্ষিত কুস্তিগীরও। সত্যি কথা বলতে, কুস্র আখড়ায় না গেলে হয়তো তাঁর রাজনীতিতে আসাও হত না। ১৯৬০-এর দশকের গোড়ায়, ইটাওয়ার যশবন্ত নগরের সোশ্যালিস্ট পার্টির বিধায়ক নাথু সিং, মৈনপুরী জেলায় একটি কুস্তি প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছিলেন। সেখানে মুলায়মের কুস্তির দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। তরুণ কুস্তিগীরের সঙ্গে কথা বলে নাথু সিং জেনেছিলেন মুলায়ম শিক্ষিত এবং একটি স্থানীয় এক কলেজে অধ্যাপনা করছেন। এরপরই নাথু সিং অবতীর্ণ হয়েছিলেন মুলায়মের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে।

সাইকেল

সমাজবাদী পার্টির নির্বাচনী প্রতীক সাইকেল। আর প্রতীক হিসেবে এই সাইকেল বেছে নেওয়ার পিছনে রয়েছে যাদব পরিবারের দারিদ্রের কাহিনি। ইটাওয়া জেলার সাইফাইয়ে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুলায়ম। বাবা-মা পাঁচ ভাইবোনের পরিবার আর্থিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল ছিল। যখনই মুলায়মকে গ্রামের বাইরে কোথাও যেতে হত, তাঁকে পাড়া-প্রতিবেশীদের কারোর কাছ থেকে একটি সাইকেল ধার করতে হত। কারণ তাঁর পরিবারের সেই সময়ে একটি সাইকেল কেনারও ক্ষমতা ছিল না। সেই সাইকেলই পরে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বাহন হয়ে দাঁড়ায়।

দলবদলে ক্লান্ত

১৯৯২ সালে, নিজের দল সমাজবাদী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। নতুন দল গঠনের একমাত্র কারণ ছিল দলবদবলের ক্লান্তি। ১৯৬০ সালে জনতা দলে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে দলের সভাপতিও নিযুক্ত হন। কিন্তু ১৯৮৫ সালে জনতা দল ভেঙে গিয়েছিল। সেই সময় চন্দ্র শেখর এবং সিপিআই-এর সঙ্গে জোট বেঁধে মুলায়ম সিং যাদব “ক্রান্তিকারি মোর্চা” চালু করেছিলেন। ১৯৯০ সালে কেন্দ্রে ভিপি সিং সরকারের পতনের পর, তিনি চন্দ্র শেখরের জনতা দল (সমাজবাদী)-তে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে হারের পর, নিজস্ব রাজনৈতিক বক্তব্য় পেশ করার জন্য আর অন্যান্য দলের উপর নির্ভর করতে পারেননি মুলায়ম। এই দল থেকে ওই দলে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে নিজের দল গঠন করেছিলেন।

প্রাণঘাতী হামলা

১৯৮৪ সালের ৪ মার্চ মুলায়ম সিং যাদবের উপর একটি প্রাণঘাতী হামলা হয়েছিল। ইটাওয়ায় এক সমাবেশ শেষে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে তিনি মাহিখেড়া গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মৈনপুরীর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই, তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি ছুড়েছিল দুই বাইকআরোহী আততায়ী। মুলায়মের নিরাপত্তা কর্মীরা পাল্টা জবাব দিলে, হামলাকারীদের একজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। অপরজন গুরুতর আহত হয়েছিল। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন মুলায়ম।

প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী

১৯৯৬ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল মুলায়মের সামনে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ১৩ দিনের মধ্যে পতন ঘটেছিল। তৃতীয় ফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভিপি সিং, জ্যোতি বসুর পাশাপাশি উঠেছিল মুলায়ম সিং যাদব এবং লালু প্রসাদ যাদবের নামও। প্রবীণ সিপিএম নেতা হরকিশেন সিং সুরজিতই, মুলায়মের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তবে লালুপ্রসাদ যাদব ও শরদ যাদবের বিরোধিতার কারণে মুলায়মের প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি। পরে এইচডি দেবগৌড়া এবং আই কে গুজরাল প্রধানমন্ত্রী হন। মুলায়ম দুই মন্ত্রিসভাতেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আকাশ থেকে বলে দিতেন গ্রামের নাম

একবার কারোর সঙ্গে দেখা হলে, তাকে সারাজীবন মেন রেখে দেওয়ার মতো স্মৃতিশক্তি ছিল মুলায়মের। গোটা উত্তরপ্রদেশের মানচিত্রটি তাঁর মনে গাঁথা ছিল। শোনা যায়, হেলিকপ্টারে করে আকাশপথে যাওয়ার সময়, সেখান থেকেই দেখে তিনি বলে দিতেন কোন গ্রামের উপর দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সেই গ্রামে কোন জাতির কত ভোট রয়েছে, তাও ছিল তাঁর ঠোটস্থ।

গোপন বিয়ে

মুলায়ম সিং যাদবের প্রথম বিয়ে হয়েছিল মালতী দেবীর সঙ্গে। ১৯৭৩ সালে অখিলেশ যাদবের জন্মের সময়, প্রসব সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন মালতী দেবী। ওই অবস্থায় ২০০৩ সাল পর্যন্ত বেঁচেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ১৯৯০-এর দশকে সাধনা গুপ্তা নামে আরেক মহিলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মুলায়ম। কিন্তু, তাঁর এই দ্বিতীয় বিবাহর কথা দীর্ঘদিন পর্যন্ত কেউ জানত না। একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর, সুপ্রিম কোর্টে দ্বিতীয় বিয়ের কথা স্বীকার করেছিলেন ‘নেতাজি’।

গলতি হো জাতি হ্যায়

২০১২ সালের দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যা মামলা চলাকালীন, এক জনসভায় বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। তাঁর বক্তব্য ছিল, “লড়কে, লড়কে হ্যায়…গলতি হো জাতি হ্যায়” (ছেলেরা ছেলেই…তাদের ভুল হয়ে যায়)।