মুম্বই: মঙ্গলবার রাতে, মা বীনা জৈনকে হত্যা এবং তারপর তার দেহ টুকরো টুকরো করার অভিযোগে মুম্বই লালবাগের বাসিন্দা ২৪ বছরের রিম্পল জৈনকে গ্রেফতার করেছিল মুম্বই পুলিশ। বৃহস্পতিবার এই ঘটনার বিশদ বিবরণ প্রকাশ করল পুলিশ। তারা জানিয়েছে, রিম্পল তার মায়ের দেহ টুকরো টুকরো করে ফ্ল্যাটের বিভিন্ন জায়গায় আলাদা আলাদা ভাবে রেখে দিয়েছিল। গন্ধ লুকানোর জন্য ২০০ বোতল পারফিউম এবং এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করেছিল সে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। কেউ তার মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে, বীনা কানপুরে গিয়েছেন বলে কাল্পনিক কাহিনি শোনাত।
দুর্গন্ধের উৎস লোহার আলমারি
রিম্পলের মামার অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ তাদের ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছিল পুলিশ। তারা দেখেছিল ঘরে সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে, সেই সঙ্গে কটু গন্ধ। দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে একটি লোহার আলমারি পেয়েছিল পুলশ। আলমারিটা খুলতেই গোটা বাড়িতে ছড়িয়ে যায় দুর্গন্ধ। আলমারিটি থেকে পুলিশ একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ পায়, যার ভিতরে ছিল একটি পচে যাওয়া ধড়। এরপর, একটি ছোট স্টিলের ট্যাঙ্কের মধ্যে একজোড়া হাত ও পা খুঁজে পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয় এবং রিম্পলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। আরও অনুসন্ধানে একটি বৈদ্যুতিক মার্বেল কাটার, একটি দা এবং একটি ছুরি পাওয়া যায়। মৃতদেহটি কেইএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অন্যান্য আত্মীয়রা দেহটি বীণা জৈনের বলে শনাক্ত করেন।
২০০ বোতল পারফিউম
হত্যার পর রিম্পল কাছের একটি ফার্মেসি থেকে পরফিউম কিনে এনেছিল। সেগুলি সে ধড় রাখা প্লাস্টিকে এবং স্টিলের ট্যাঙ্কে ঢেলে দিয়েছিল। এরপরও, খাবার কিনতে বাইরে গেলে প্রতিবেশীরা সবসময় দুর্গন্ধ নিয়ে অভিযোগ করত। ফলে সে আরও এয়ার ফ্রেশনার এবং পারফিউম কিনে এনেছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ বোতল। কিন্তু, তার মা এবং দুর্গন্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন তাতে থামেনি। বিরক্ত হয়ে সে বাইরে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল।
রিম্পলকে অস্বাভাবিক ছিল না
জৈন পরিবার আগে লালবাগেই থাকত। তবে রিম্পলের বাবা-মা, প্রকাশ এবং বীণার বিয়ে হওয়ার পর তারা বীরারে চলে গিয়েছিল। ২০১৬ সালে এক গুরুতর অসুস্থতায় মারা যান প্রকাশ জৈন। পরে বীনাও একই রোগে আক্রান্ত হন। তাঁর ভাইরা রিম্পল এবং তাঁকে ফের লালবাগে নিয়ে এসেছিলেন। র সিদ্ধান্ত নেয়। তার ভাই সুরেশকুমার জানিয়েছেন, এমন কিছু ঘটবে তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। রিম্পলকে কখনই অস্বাভাবিক মনে হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি। একই দাবি করেছেন রিম্পলদের বড়ির উল্টো দিকের রাস্তায় বড়া পাওয়ের স্টলের মালিক সঞ্জয় পওয়ার। তিনি জানিয়েছন, রিম্পলকে তিনি বড় হতে দেখেছেন। গত সপ্তাহ পর্যন্ত, সে তাঁর দোকান থেকে বড়া পাও, সামোসা পাও, প্যাটিস কিনেছে।
কারোর সঙ্গে কথা বলত না রিম্পল
রিম্পলদের এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, সে প্রতিবেশিদের সঙ্গে খুব কমই কথা বলত। তার মা সবার সঙ্গে কথা বলতেন ঠিকই, কিন্তু সবসময় একটা দূরত্ব বজায় রাখতেন। মা ও মেয়ে দুজনেই কখনও বাইরে কোথাও যায়নি, বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় থাকত।