মুম্বই: চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে পেটে ঘা হয়ে মৃত্য়ু হয়েছিল মা। মাস খানেক পার হতে না হতেই, ছেলেরও একই রোগ ধরা পড়ল। এতেই খটকা লেগেছিল পরিবারের সদস্যদের। অন্যদিকে, রক্তের পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেও সন্দেহ জেগেছিল চিকিৎসকের মনে। সপ্তাহ খানেক চিকিৎসা চালানোর পরই মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। পুলিশ প্রাথমিকভাবে আকস্মিক মৃত্যু বলে গণ্য করলেও, চিকিৎসকের কথায় তাদের মনেও জেগেছিল সন্দেহ। আর সেই কারণেই ক্রাইম ব্রাঞ্চের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর তারপরই তদন্তে ফাঁস হল আসল রহস্য। জানা গেল স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিক মিলেই চক্রান্ত করে খুন করেছেন স্বামীকে। যাতে ধরা না পড়েন, তার জন্য মাসের পর মাস ধরে খাবারে মিশিয়ে দিতেন অল্প মাত্রার বিষ। এভাবেই সফল হয়েছিল তাদের পরিকল্পনা, কিন্তু ধরিয়ে দিল একটা রক্তের পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসকের সন্দেহ। ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কমলাকান্ত নামক এক ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে বিষ দিয়ে খুন করার অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ব্যক্তির স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিককে। আগামী ৮ ডিসেম্বর অবধি ওই দুইজনকে পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত কবিতা কয়েক বছর আগে স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতিই সন্তানের ভবিষ্যতের দোহাই দিয়ে তিনি ফের স্বামীর সঙ্গে থাকা শুরু করেন।
এদিকে, সান্টাক্রুজের বাসিন্দা কমলাকান্তের বাল্যবন্ধু হীতেশ জৈনই তাঁর স্ত্রী কবিতার প্রেমিক। দুইজনই ব্যবসায়ী পরিবারের। স্ত্রীর যে বাল্যবন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তা জানতেন না কমলাকান্ত। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ কমলাকান্তের মায়ের মৃত্যু হয় পেটে ঘা হওয়ার কারণে। কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই কমলাকান্তেরও একই সমস্য়া দেখা যায়। দ্রুত স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। চিকিৎসকরা রক্তের পরীক্ষা করে দেখতে পান, তাঁর রক্তে আর্সেনিক ও থ্যালিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি। মানব দেহে এই দুই ধাতব উপাদানেরই উপস্থিতি অস্বাভাবিক।
গত ১৯ নভেম্বর কমলাকান্ত বম্বে হাসপাতালে মারা যান। পুলিশ প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। এরপরই মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চকে ঘটনার তদন্ত তুলে দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ মৃতের পরিবারের সদস্যদের জেরা করেই কবিতা ও হীতেশকে গ্রেফতার করে। জেরায় জানা যায়, অভিযুক্ত কবিতা ও তাঁর প্রেমিক নিয়মিত কমলাকান্তের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিত। তবে বিষের মাত্রা এতটাই কম রাখতেন, যাতে আপাতচোখে ধরা না পড়েন। বর্তমানে পুলিশ তদন্ত করে দেখছে যে কমলাকান্তের মাকেও একইভাবে খুন করা হয়েছিল কি না।