মুম্বই: বিগত চারদিন ধরে নিম্নমুখীই ছিল সংক্রমণ, বুধবার ফের একধাক্কায় বাড়ল বাণিজ্যনগরীতে করোনা সংক্রমণ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার মুম্বইতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৪২০ জন। হঠাৎ করে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহরে সংক্রমণের হারও ১৮.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৪.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিধিনিষেধের কড়াকড়ির জেরে বিগত চারদিন ধরে টানা নিম্নমুখীই ছিল মুম্বইয়ের সংক্রমণ। কিন্তু বুধবার থেকেই তা ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু মুম্বই-ই নয়, গোটা মহারাষ্ট্রেই বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ। মঙ্গলবার রাজ্যে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪২৪, সেটাই বুধবারে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৭২৩-এ। অর্থাৎ একদিনেই রাজ্যে সংক্রমণের হার ৩৫.৭ শতাংশে বেড়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের থেকেও বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। সোমবার রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল ৮ জনের। মঙ্গলবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২-এ। বুধবার সেই সংখ্যাটা আরও বেড়ে ৩২-এ পৌঁছেছে।
রাজ্যে সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হতেই ফের একবার সতর্কবার্তা দিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেন, “দয়া করে কেউ অসচেতন হবেন না। করোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ বা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই আক্রান্তের সংখ্যা ও হাসপাতালে রোগী ভর্তির হারে ব্যপক বৃদ্ধি হতে পারে।”
তিনি বলেন, “রাজ্যে মেডিকেল অক্সিজেনের ব্যবহারও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে অক্সিজেনের ব্যবহার দৈনিক ৪০০ মেট্রিক টনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে। যদি প্রতিদিন ৭০০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে, তবে রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতেই হবে।”
সংক্রমণ বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই জেলা প্রশাসনের তরফে যাতে করোনা টিকাকরণের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয় এবং অন্যান্য প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়, সেই নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুম্বই ছাড়াও বর্তমানে রাজ্যের শহরতলীতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
গত ৭ জানুয়ারি মুম্বইয়ে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৯৭১। ৮ জানুয়ারি তা কমে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৩১৮-এ। পরের দিন অর্থাৎ ৯ জানুয়ারি তা আরও কমে ১৯ হাজার ৪৭৪ -এ পৌঁছয়। চলতি সপ্তাহের সোমবার এক ধাক্কায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায় সংক্রমণ, দৈনিক আক্রান্তে সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৪৮-এ পৌঁছয়। মঙ্গলবারও দৈনিক সংক্রমণ আরও ১৪.৬ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৬৪৭-এ পৌঁছয়। এত দূর অবধি সব ঠিক চললেও, বুধবার ফের এক ধাক্কায় সংক্রমণ প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে ১৬ হাজার ৪২০-তে পৌঁছয়।
টেস্ট পজেটিভিটি রেট, অর্থাৎ করোনা পরীক্ষা পিছু রিপোর্ট পজেটিভ আসার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহ্নমুম্বই মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ জানুয়ারি ৬২ হাজার ৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এরমধ্যে ১৮.৭ শতাংশেরই রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। পরেরদিনই, অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি ৬৭ হাজার ৩৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তার মধ্যে ২৪.৩ শতাংশের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে।
তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। মঙ্গলবার যেখানে ৭২৮৩ টি শয্যায় করোনা রোগী ছিল, সেখানেই বুধবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯৪৬-এ। বর্তমানে মুম্বইয়ে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ শয্যার মাত্র ১৮.৮ শতাংশই পূর্ণ হয়েছে।