ওয়েনাড়: সন্তানদের কোলাহল। বড়দের হাসি-ঠাট্টা। এক সপ্তাহ আগেও পৃথিবীটা ‘সম্পূর্ণ’ ছিল তাঁর কাছে। ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরও খুব একটা ভাবনায় পড়েননি। কিন্তু, একটা ভূমিধসে পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছে ওয়েনাড়ের মনসুরের। পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা। পৃথিবীটা এখন তাঁর কাছে শূন্য মনে হচ্ছে। মনে মনে বিড়বিড় করছেন, “আমার আর কিছুই রইল না।”
ওয়েনাড়ের চুরালমালার বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের মনসুর। মা, স্ত্রী, দুই সন্তান ও বোন এবং বোনের পরিবারের আত্মীয়দের নিয়ে ভরা সংসার ছিল তাঁর। গত ৩০ জুলাই ধসে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী, মা, দুই সন্তান, বোন এবং বোনের পরিবারের ১১ জন ধসের তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন।
সেই ঘটনার ৬ দিন পরও ঘোর কাটেনি মনসুরের। ঘুমোতে পারেননি। কেঁদে কেঁদে চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। বিড়বিড় করে বললেন, “আমার আর কিছু নেই। আমার পরিবার, আমার বাড়ি, সব চলে গিয়েছে।” প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের দিন কাজের জন্য বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন মনসুর। না হলে তাঁর কী হত, তা নিয়ে ভাবছেন না মনসুর। ১৬ জনের সবার মৃতদেহ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাঁদতে কাঁদতে মনসুর বলেন, “এখনও মেয়ের দেহ খুঁজে পাইনি। আমার স্ত্রী, ছেলে, মা ও বোনের দেহ পেয়েছি।” মনসুরের ভাই নাসির বলেন, চার জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। এখনও ১২ জনের দেহ পাওয়া যায়নি। নাসির বলেন, “আমিও এই এলাকায় বাস করতাম। তবে এখন অন্য জায়গায় থাকি।” ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গেই এই কয়েকদিন রয়েছেন মনসুর। নাসিরের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কোনও পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “জলস্তর বাড়ার পর দাদাকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসতে বলেছিলাম। তখন দাদা বলেছিল, তারা নিরাপদেই রয়েছে। কিন্তু, সব শেষ হয়ে গেল। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আমার ভাই সবকিছু হারাল।”
এখনও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। ১২ জনের দেহের খোঁজে ধ্বংসস্তূপের সামনে অপেক্ষায় মনসুর। যদি কিছু মিরাক্যাল ঘটে, পরিবারের কাউকে যদি জীবিত পাওয়া যায়, মনসুরের মনের কোণে কোথাও সেই আশাও উঁকি দিচ্ছে? উত্তর পাওয়া গেল না। উদাস চোখে ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে মনসুর।