নয়া দিল্লি : জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজ়ো আবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক বরাবরই খুব ভাল ছিল। শুধু কূটনৈতিক স্তরেই নয়। ব্যক্তিগত স্তরেও দুই জনের সম্পর্ক ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। শুক্রবার জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর উপর হামলা এবং তাঁর মৃত্যুতে ভীষণভাবে শোকাহত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারাক্রান্ত মনে প্রয়াত বন্ধুর স্মৃতিচারণা করেছেন নমো। লিখেছেন, “শিনজ়ো আবে ছিলেন জাপানের অসাধারণ এক রাজ-নেতা, বিশ্বের আঙিনাতেও তাঁর রাজনৈতিক পারদর্শিতা ছিল উল্লেখযোগ্য। ভারত ও জাপানের মধ্যে যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার চ্যাম্পিয়ন ছিলেন শিনজ়ো আবে। তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই। জাপান তথা গোটা বিশ্ব একজন মহান নেতাকে হারাল। আর আমি নিজের এক প্রিয় বন্ধুকে হারালাম।”
জাপানের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম আলাপের দিনটিও মোদীর মননে এখনও স্পষ্ট। শিনজ়োর স্মৃতিচারণায় সেই কথাও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সালটা ছিল ২০০৭। মোদী তখনও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হননি। তিনি তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জাপান সফরে গিয়েছিলেন নমো। শিনজ়ো আবের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের সূত্রপাত সেখান থেকেই। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং অফিসিয়াল প্রোটোকলের চৌহদ্দির বাইরেও তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। প্রিয় বন্ধু শিনজ়োর সঙ্গে কাটানো বেশ কিছু মুহূর্তের কথাও উল্লেখ করেছেন মোদী। তার মধ্যে রয়েছে, একসঙ্গে কিয়োটোর তোজি মন্দির দর্শন, একসঙ্গে ট্রেনে চেপে শিনকানসেন যাওয়া। এছাড়া শিনজ়ো যখন ভারতে এসেছিলেন, তখন একসঙ্গে আহমেদাবাদের সবরমতি আশ্রম পরিদর্শন, কাশীতে গঙ্গা আরতি একসঙ্গে দেখা… এমন বহু টুকরো টুকরো স্মৃতির কথা ঘুরে ফিরে এসেছে মোদীর স্মৃতিচারণায়।
মাউন্ট ফুজির পাদদেশে ইয়ামানাশিতে আবের পারিবারিক বাসভবনেও আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকী শিনজ়ো আবে যখন ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না এবং ২০২০ সালের পরেও দুই দেশের নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধন একইরকম অটুট ছিল। রাজ-নেতা হিসেবে আবের দক্ষতার কথা স্মরণ করে মোদী লিখেছেন, তাঁর সঙ্গে প্রতিটি বৈঠকই ভীষণভাবে বুদ্ধদীপ্ত ছিল। তিনি সর্বদা সুশাসন, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, কূটনীতি এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর পরামর্শ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল গুজরাটের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। জাপানের সঙ্গে গুজরাটের প্রাণবন্ত পার্টনারশিপ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর সমর্থন সবসময় সহায়তা করেছিল।
শুধু তাই নয়, ভারত – জাপান দুই দেশের মধ্য কূটনৈতিক সম্পর্কের কথাও তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লিখেছেন, “ভারত ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছি।” এর পাশাপাশি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শিনজ়ো আবের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এছাড়া, ভারতের সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি, ভারতে হাই স্পিড রেলের ক্ষেত্রে শিনজ়ো আবের অগ্রণী ভূমিকার কথাও স্মরণ করেছেন নমো।