পাতিয়ালা: শুক্রবার বিকালে পাতিয়ালা কোর্টে আত্মসমর্পণ করলেন পঞ্জাবের প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান নভজোৎ সিং সিধু। বৃহস্পতিবারই, ১৯৯৮ সালের এক অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলায় তাঁকে একবছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল গুরনাম সিং নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধের। এদিন আত্মসমর্পণের পর প্রথমে, মাতা কৌশল্যা হাসপাতালে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর, পাতিয়ালা কোর্টের প্রধান বিচারপতি অমিত মালহান সিধুকে পাতিয়ালা সেন্ট্রাল জেলে পাঠান।
এর আগে, স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা বলে, আত্মসমর্পণ করার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতির আঙিনায় আসা এই রাজনীতিবিদ। তবে, সিধুর আইনি দল সুপ্রিম কোর্ট থেকে এই বিষয়ে কোনও নির্দেশ আদায় করতে পারেনি। এরপরই, বিকাল ৪টে নাগাদ আত্মসমর্পণ করেন সিধু। সিধুর কাছের লোক বলে পরিচিত, প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক নভজিৎ সিং চিমা নিজে গাড়ি চালিয়ে সিধুকে আদালতে পৌঁছে দেন। চিমা ছাড়াও, প্রাক্তন বিধায়ক অশ্বনি সেখরি, হরদিয়াল সিং কাম্বোজ, সুরজিত সিং ধীমান-সহ পঞ্জাব কংগ্রেসে সিধুর পক্ষে থাকা নেতাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সিধুর পরণে ছিল নীল কুর্তা এবং লাল রঙের পাগরি।
সিধুর মিডিয়া উপদেষ্টা সুরিন্দর ডাল্লা বলেছেন, ‘সিধুর কোনও ভিআইপি খাতির দরকার নেই, তবে তাঁর চিকিৎসা সংক্রান্ত যত্নের দরকার রয়েছে’। এদিন নভজোৎ সিং সিধুর আইনজীবী এইচপিএস ভার্মা আদালতেও ৫৮ বছর বয়সী সিধুর স্বাস্থ্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি আদালতকে জানান, সম্প্রতি সিধুর একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সিধুকে কিছু ওষুধ খেতে হয় এবং তাঁর এক বিশেষ ডায়েট দরকার। তাঁর গমের আটা খাওয়া নিষেধ। আদালতকে চিকিৎসা ও বিশেষ খাদ্যের সুবিধা দেবে বলেই আশা করছেন তাঁরা।
এদিকে, নভজোৎ সিং সিধুর আগমনের জন্য এদিন সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল পাতিয়ালা সেন্ট্রাল জেল। শুক্রবার সকালেই পঞ্জাবের পুলিশের এডিজি বীরেন্দর কুমার কারাগারে এসে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। তিনি সাফ জানান, পাতিয়ালা সেন্ট্রাল জেলে কাউকে কোনও বিশেষ খাতির করা হবে না। পরে, জেল কর্তারা দাবি করেন, এডিজি-র এই সফর ছিল একেবারেই রুটিন সফর। তবে, পাতিয়ালা সেন্ট্রাল জেলে যে শুধুমাত্র সিধু একাই ভিআইপি বন্দি, তা নয়। তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিক্রম সিং মাজিথিয়ারও বর্তমান ঠিকানা এই কারাগারই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মাদক পাচার মামলায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন তিনি।
১৯৮৮ সালে গুরনাম সিং নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে গাড়ি রাখা নিয়ে বচসা হয়েছিল কথা কাটাকাটির মধ্যে মেজাজ হারিয়ে গুরনাম সিংয়ের মাথায় আঘাত করে বসেছিলেন সিধু। দিন কয়েক পরে মৃত্যু হয়েছিল ৬৫ বছরের ওই প্রৌঢ়ের। এরপরই সিধুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিল তাঁর পরিবার। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ১৯৯৯ সালে পাতিয়ালা ট্রায়াল কোর্ট হত্যার অভিযোগ থেকে সিধুকে মুক্তি দিয়েছিল। ২০০৬ সালে গুরনাম সিংয়ের পরিবার ট্রায়াল কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিল হাইকোর্টে। উতচ্চ আদালত সিধুকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের জেল এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানার রাজা দিয়েছিল। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সিধু।