কলকাতা: বাংলাদেশের উপর প্রভাব বাড়ানোর অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে চিন। বেজিং-এর সঙ্গে ঢাকার এই কূটনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ককে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে ভারত। কারণ, শুধু তো ডোকলাম বা পূর্ব লাদাখের মতো স্থলপথে নয়, ভারত মহাসাগর সংলগ্ন এলাকায় জলপথেও দাদাগিরির চেষ্টা করছে চিন। মাঝেমধ্যেই ভারত মহাসাগরের আশপাশে হানা দিচ্ছে চিনা সাবমেরিন বা অন্য কোনও রণতরী। এই বিষয়টা যে মোটেই ভালভাবে নিচ্ছে না ভারত সরকার, তা আগেই হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এই কারণেই নৌসেনার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধীনস্থ, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের জলসীমান্তগুলিতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করেছে নৌসেনা। এই এলাকায় অতিরিক্ত যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করেছে নৌবাহিনী। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন নৌসেনার ওয়েস্ট বেঙ্গল ফ্লিটের নাভাল অফিসার ইন কমান্ড, পি শশী কুমার।
এদিন, খিদিরপুর ডকে যুদ্ধজাহাজ প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। এই অনুষ্ঠানেই তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ সীমান্ত অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ। কিন্তু তারপরও আমাদের তরফে বাড়তি সতর্কতা থাকেই। ইতিমধ্যেই পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অন্তর্গত জল সীমান্ত বরাবর, নজরদারির জন্য বাড়তি যুদ্ধ-জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। এই এলাকায় যে কোনও পরিস্থিতির জন্য আমরা নিজেদেরকে তৈরি রেখেছি। চিনের তরফে যদি কোনও রকম অতিরিক্ত তৎপরতা দেখা যায়, তাহলে সেটা আমরা অবিলম্বে নৌবাহিনী সর্বোচ্চ মহলে জানাই। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে জলসীমান্তের অধিকাংশ এলাকাতেই নজরদারির দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফ এবং ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। পাচার রোধ, পাচারকারীদের মাধ্যমে অনুপ্রবেশের চেষ্টা রোখার কাজ যথেষ্ট গুরুত্ব সরকারে করে থাকে এই দুই বাহিনী। তবে, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে হস্তক্ষেপ করতে দুবার ভাবে না ভারতীয় নৌসেনা।
প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ দক্ষিণ চিন সাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই আগ্রাসী ভূমিকায় রয়েছে চিন। দক্ষিণ চিন সাগরে এই চিনা আগ্রাসন নিয়ে সাম্প্রতিককালে ওয়াশিংটন এবং বেজিংয়ের মধ্যে বৈরিতা চরম সীমায় পৌঁছেছে। সম্প্রতি এই এলাকায় ফিলিপাইন্সের একটি পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে গোলাও ছুড়েছে চিনের নৌসেনা। মূলত চিনকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যেই কোয়াড জোট তৈরি করেছে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া। শুধু দক্ষিণ চিন সাগর নয়, মাঝেমধ্যে ভারত মহাসাগরে যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন পাঠিয়ে উপমহাদেশেও দাদাগিরির চেষ্টা চালায় চিন। শ্রীলঙ্কা এবং মলদ্বীপের সঙ্গেও কৌশলী সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে বেজিং।
এতে স্বাভাবিকভাবেই ভারতের অস্বস্তি বেড়েছে। আর এই কারণেই দেশের জল সীমান্তগুলিতে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজের মোতায়েন করেছে নৌবাহিনী। নৌবাহিনী সূত্রে খবর, ভারতের জল সীমান্তের মধ্যে ঢুকে পড়ে, চরবৃত্তির চেষ্টা চালাচ্ছে পিপলস লিবারেশন নৌবাহিনী। সেই প্রেক্ষিতে, পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের নাভাল অফিসার ইন কমান্ডের বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার, চিন নিজেদের জল সীমার মধ্যে থেকে যা খুশি করুক, ভারত তা দেখতে যাবে না। কিন্তু দেশের সীমান্তের কাছাকাছি যদি চিন কোনওরকম অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে কিন্তু উপযুক্ত জবাবের জন্য তৈরি থাকতে হবে তাদের।