চেন্নাই: ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে জোর ধাক্কা এনডিএ জোটে। বিজেপির সঙ্গ ছাড়ল আরও এক বড় জোট শরিক, এআইএডিএমকে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) চেন্নাইয়ে দলের সদর দফতরে সাংসদ, বিধায়ক এবং জেলা প্রধানদের এক বৈঠকে এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি রেজোলিউশন পাশ করেছে এআইএডিএমকে। বৈঠকের পর সরকারি ভাবে জোট ভাঙার ঘোষণা করেছেন এআইএডিএমকে-র ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি কেপি মুনুসামি। দলীয় কর্মী-সমর্থকরা আতশবাজি পুড়িয়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনা নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি। এর আগে, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে), জেডি(ইউ) এবং অকালি দলের মতো এনডিএ শরিকরা জোট ত্যাগ করেছিল। এদিন এআইএডিএমকে বেরিয়ে যাওয়ার পর, এনডিএ জোট এখন ‘অর্থহীন’ বলে জানিয়েছে বিরোধী জোট।
বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, “শিবসেনা, জেডি(ইউ) এবং অকালি দলের পর, এই বিচ্ছেদ বিজেপির জন্য বড় ক্ষতি। এআইএডিএমকে দক্ষিণ ভারতে এনডিএ-তে সবথেকে বড় শরিক ছিল। এই বিচ্ছেদের ফলে, বিজেপির নির্বাচনী সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেল। বর্তমানে এনডিএ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। স্পষ্টতই দেশে একজন স্বৈরশাসক বসে আছেন। মাত্র দুজন লোক এখন দেশ চালাচ্ছেন। জোটে থাকবে কি থাকবে না, এটা তাদের ব্যাপার। আমি এই বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে খুবই শক্তিশালী। কংগ্রেস এবং ডিএমকে জোট অত্যন্ত শক্তিশালী। কয়েকদিন আগে এনডিএ-র একটা বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু, তাতে কোনও ফল হয়নি। সেই বৈঠকের কোনও অ্যাজেন্ডা ছিল না। দক্ষিণ ভারতে এনডিএর এক বড় শরিক জোট ছেড়ে দিল।”
#WATCH | On AIADMK breaking alliance with BJP and NDA, Bihar Deputy CM and RJD leader Tejashwi Yadav says, “…It is their matter. I won’t be able to say much on this. DMK is very strong in Tamil Nadu. Congress and DMK alliance there is very strong. An NDA meeting was held a few… pic.twitter.com/nt7plElemv
— ANI (@ANI) September 25, 2023
এআইএডিএমকে-র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর কংগ্রেস নেতা রশিদ আলভি। একে অত্যন্ত ভাল পদক্ষেপ বলেছেন তিনি। কংগ্রেস নেতা বলেছেন “যদি তারা এনডিএ এবং বিজেপির আদর্শ বুঝে থাকে এবং বিজেপির সঙ্গে কোনও রকম দর কষাকষির কথা না ভেবে, সাবধানী ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তবে এটি অবশ্য়ই একটা ভাল পদক্ষেপ। বিজেপি তার মিত্রদের সম্মান করে না। আপনারা শিবসেনাকে জোট ছাড়তে দেখেছেন, অকালি দলকে জোট ছাড়তে দেখেছেন। উত্তর প্রদেশেও বেশ কয়েকটি দল তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।” ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেসের প্রধান রাজেশ ঠাকুর বলেছেন, “অনেক আঞ্চলিক দলই বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এখন এআইএডিএমকেও তাদের ছেড়ে চলে গেল। এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বিজেপির দিন দিন সমর্থন হারাচ্ছে।”
#WATCH | On AIADMK breaking alliance with BJP and NDA, Congress leader Rashid Alvi says, “This is a good step. If they have understood the ideology of NDA and BJP and took this decision after careful consideration and not for any bargaining with BJP, then it is a good step…BJP… pic.twitter.com/xaLOd9myhk
— ANI (@ANI) September 25, 2023
তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা দ্রাবিড় রাজনীতির প্রাণপুরুষ, সিএন আন্নাদুরাই সম্পর্কে সম্প্রতি রাজ্য বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাইয়ের এক বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে, গত কয়েকদিন ধরেই দুই দলের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ওই মন্তব্যের জেরেই এই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে, জানিয়েছে এআইএডিএমকে নেতৃত্ব। এই বিচ্ছেদের বিষয়ে কর্নাটকের সাংসদ তথা বিজেপি নেতা সিটি রবি বলেছেন, “লোকসভা নির্বাচনের আরও আট মাস বাকি। এই কয়েক মাসে কী ঘটবে, কিছুই বলা যায় না। দলকে শক্তিশালী করা প্রতিটি কর্মীর কর্তব্য। কে আন্নামালাইয়ের নেতৃত্বে তামিলনাড়ুতে দল শক্তিশালী হচ্ছে।” অন্যদিকে, খোদ কে আন্নামালাই বলেছেন, “আমি এই বিষয়ে পরে কথা বলব। এখন মিছিলে ব্যস্ত আছি, মিছিলের সময় আমি অন্য কোনও বিষয়ে কথা বলি না। জাতীয় নেতৃত্বকে এআইএডিএমকে সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাব। সময়মত এই বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া জানাব।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, বিজেপির সঙ্গে জোট গঠন করেছিল এআইএডিএমকে। তবে, জোট গড়ে তাদের লাভ তো হয়নি, বরং রাজনৈতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিল তারা। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে, এককভাবে লড়ে তামিলনাড়ুর ৩৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৭টিতে জয় পেয়েছিল এআইএডিএমকে। অন্যদিকে, ২০১৯-এ বিজেপির হাত ধরার পর, দল জিতছিল মাত্র একটি আসনে। জয় পেয়েছিলেন একমাত্র
ও পনিরসেলভমের ছেলে রবীন্দ্রনাথ কুমার। শুধু আসন নয়, ভোট প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও ধস নেমেছিল। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়ে তাদের লাভ হয় কিনা, সেটাই দেখার।