‘মানুষ মরছে আর আমরা বিলাসবহুল হোটেল চাইব?’ পাঁচতারা হোটেলের নির্দেশিকায় তীব্র ভর্ৎসনা হাইকোর্টের

তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী | Edited By: ঋদ্ধীশ দত্ত

Apr 27, 2021 | 7:12 PM

পাঁচতারা হোটেলে চিকিৎসা হবে বিচারপতিদের। এই নির্দেশিকায় তৈরি হয় বিতর্ক। এরপরই সরকারকে ভর্ৎসনা বিচারপতির।

মানুষ মরছে আর আমরা বিলাসবহুল হোটেল চাইব? পাঁচতারা হোটেলের নির্দেশিকায় তীব্র ভর্ৎসনা হাইকোর্টের
নির্দেশিকা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত

Follow Us

নয়া  দিল্লি: ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির ছবিটাও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিনিয়ত মানুষের মৃত্যু, অক্সিজেনের অভাব এ সব খবর সামনে আসছে রাজধানী থেকে। এরই মধ্যে বিতর্ক তৈরি করেছে দিল্লির (Delhi) চাণক্যপুরীর ম্যাজিস্ট্রেটের একটি অর্ডার। যেখানে বলা হয় একটি পাঁচতারা হোটেলের ১০০ টি ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছে বিচারপতি ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের চিকিৎসার জন্য। আর প্রশাসনের এই নির্দেশিকায় যার পর নাই ক্ষুব্ধ হল দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi High Court)। ‘মানুষ যেখানে বেড না পেয়ে মারা যাচ্ছে, সেখানে এই ধরনের অর্ডার কিভাবে দেওয়া হলো?’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল্লি সরকারকে (Delhi Government) তুলোধোনা করল হাই কোর্ট।

দিল্লির চাণক্যপুরীর সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল বিচারপতি ও তাঁদের পরিবারের চিকিৎসা হবে অশোকা হোটেলে। চিকিৎসার জন্য পাঁচ তারা ওই হোটেল ভাড়া করে নেয় প্রশাসন। জানানো হয় ওই হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেবে প্রাইমাস হাসপাতাল। হোটেলে কর্মীর অভাব হলে সেই অভাবও মেটাতে হাসপাতাল। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই এই নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সাধারণ মানুষ যেখানে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, সেখানে বিচারপতিদের জন্য কেন এই বিলাসবহুল ব্যবস্থা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। আর সেই নির্দেশিকা নিয়েই দিল্লি সরকারকে এক হাতে নিল আদালত।

হাইকোর্টের তরফে এ দিন দিল্লি সরকারকে যে বার্তা দেওয়া হল:

আদালতের তরফে বলা হয়েছে, এরকম কোনও ব্যবস্থা তাঁরা কখনই চাননি। অবিলম্বে যেন ওই হোটেলে রুম ছেড়ে দেওয়া হয়, এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাই কোর্টের তরফে এ দিন দিল্লি সরকারের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘আমরা কবে এরকম ১০০ শয্যার পাঁচতারা হোটেল চেয়েছি? আমরা শুধু চেয়েছি যে বিচারপতি বা বিচারবিভাগীয় কোনও আধিকারিক সংক্রমিত হলে তাঁদের যাতে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ইতিমধ্যেই আমরা দু’জন বিচারবিভাগীয় আধিকারিককে হারিয়েছি।’

কড়া বার্তা দিয়ে আদালতে বলে, ‘আপনারা কেন এই ধরনের বিতর্ক তৈরি করলেন? মনে হচ্ছে যেন আমরা দিল্লি সরকারের কাছে এই সুবিধা চেয়েছি কিংবা আপনারা আমাদের কে সন্তুষ্ট করার জন্য এই কাজ করেছেন।’

তীব্র ভৎসনা সুরে হাই কোর্ট বলেছে, ‘মানুষ যেখানে হাসপাতাল পাচ্ছে না, আমরা সেখানে বিলাসবহূল হোটেলের বেড চাইব এ কথা ভাবলেন কি করে? এতে সংবাদমাধ্যমের কোনও দোষ নেই, আপনাদের নির্দেশিকাতেই সমস্যা আছে। কোনও প্রতিষ্ঠান এই ধরনের সুবিধা চাইছে এটা ভাবনার অতীত। ভালো হয় যদি আপনারা অবিলম্বে নির্দেশিকা তুলে নেন।’

বিচারপতি ভিপিন সঙ্ঘি বলেন, ‘লোকেরা যখন রাস্তায় মারা যাচ্ছে, তখন আমরা বিচার বিভাগীয় সংস্থা হিসেবে এটা চাইব, এটা কল্পনা করা যায় না। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যা খুশি আদেশ জারি করে দেন, সেই হাসপাতালে না আছে লোকবল, না আছে সাজসরঞ্জাম, না আছে ওষুধ বা ভেন্টিলেটর। আপনি কি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন? এতে কি সুরক্ষা আছে? এটি কি নিজের উপকারের জন্য নাকি আদালতকে খুশি করার জন্য করা হচ্ছে?’

ব্যাখ্যা দিল দিল্লি সরকার:

হাই কোর্টের প্রশ্নের জবাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে দিল্লি সরকার। তারা জানিয়েছে এই নির্দেশিকার পিছনে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। অনেক পাঁচতারা হোটেলকেই কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকারের এই ব্যাখ্যার চিড়ে ভেজেনি। দিল্লি সরকারের আইনজীবী সন্তোষ ত্রিপাঠি আদালতে বলেন, ‘আমরা এই আদেশ প্রত্যাহার করব।’

Next Article