নয়া দিল্লি: রবিবার (২৮ মে), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলেন নতুন সংসদ ভবন। পুরোনো সংসদ ভবনটি অতিব্যবহারে জীর্ণ হয়ে পড়েছিল, দেখা দিয়েছিল স্থানাভাব, একই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্থাপনে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। নয়া সংসদ ভবনটি একদিকে যেমন স্থান সঙ্কুলানের সমস্যা দূরকরবে, তেমনই প্রযুক্তির দিক থেকেও এই ভবনটি হবে অনন্য। আসলে আগামী ১৫০ বছরের কথা মাথায় রেখে এই ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। তাই ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সঙ্গে যাতে ভবনটি খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সেই কথা মাথায় রেখেই এই ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। একদিকে যেমন ভবনটি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রিন প্রযুক্তি, তেমনই ভবনটিকে ভূমিকম্পরোধী হিসেবেও তৈরি করা হয়েছে।
সাম্প্রতিকতম অডিয়ো-ভিডিয়ো প্রযুক্তি
নয়া ভবনে লোকসভা এবং রাজ্যসভা আধুনিক অডিয়ো-ভিডিয়ো সিস্টেমে সুসজ্জিত। দুই কক্ষেই সাম্প্রতিকতম মাইক লাগানো হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে স্মার্ট ভিডিয়ো সিস্টেম। শুধু লোকসভা এবং রাজ্যসভাই নয়, নয়া সংসদ ভবনের সমস্ত কমিটি রুমেও স্থাপন করা হয়েছে সাম্প্রতিকতম অডিয়ো-ভিডিয়ো প্রযুক্তি। একই অডিয়ো-ভিডিয়ো প্রযুক্তি দেখা যাবে ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রমন্ত্রীদের জন্য তৈরি কক্ষগুলিতেও।
প্ল্যাটিনাম রেটেড গ্রিন বিল্ডিং
তবে নয়া সংসদ ভবনের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হল, এটি একটি প্ল্যাটিনাম রেটেড গ্রিন বিল্ডিং। অর্থাৎ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে ভাপতের লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতির প্রতীকও এই ভবন। গ্রিন বিল্ডিং কথার অর্থ, এই ভবন তৈরিতে যে সকল উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, যে জল ব্যবহার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতি এবং ইকোফ্রেন্ডলি। ২০০০ সালে মার্কিন গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল, বিভিন্ন ভবনের ক্ষেত্রে ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়োর্মেন্টাল ডিজাইন’ বা ‘লিড’ (LEED) শংসাপত্র দেওয়া শুরু করেছিল। ভারতের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলও এই ‘সার্টিফিকেশন’ পদ্ধতি মেনে চলে। মানের উপর নির্ভর করে সিলভার, গোল্ড এবং প্ল্যাটিনাম সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। নয়া সংসদ ভবনটি ৮০-র উপর নম্বর-সহ লিড প্ল্যাটিনাম সার্টিফিকেট পেয়েছে।
‘এনার্জি সেভিং’ এবং ‘স্মার্ট’
শুধু তাই নয়, নয়া সংসদ ভবনটির পুরো আলোক ব্যবস্থাও ‘এনার্জি সেভিং’ এবং ‘স্মার্ট’। অর্থাৎ, যখন সংসদ ভবনের কোনও কক্ষে যখন কেউ থাকবে না, আলো নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিটি কক্ষের বাতানুকূল ব্যবস্থার তাপমাত্রা, কক্ষে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের দেহের তাপমাত্রা অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে। নয়া সংসদ ভবনে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং ব্যবহৃত জল পুনর্ব্যবহারের বন্দোবস্তও রয়েছে। অর্থাৎ বর্ষার জল ধরে রেখে তাকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হবে এবং ব্যবহৃত জলও ফের ব্যবরের উপয়োগী করে তোলা হবে।
ভূমিকম্পরোধী
এর সঙ্গে সঙ্গে নয়া সংসদ ভবন ভূমিকম্পরোধীও বটে। সিসমিক জোন ৫ অর্থাৎ অতি গুরুতর ভূকম্পন এলাকার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ রিখটার স্কেলে বড় মাত্রার ভূমিকম্প এলেও, কিচ্ছু হবে না নয়া সংসদ ভবনের। বর্তমানে সিসমিক জোন ৪-এ রয়েছে রাজধানী দিল্লি। তবে, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই, নয়া সংসদ ভবনটি সিসমিক জোন ৫-এর উফযোগী করে তৈরি করা হয়েছে।
বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
এর পাশাপাশি বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিবর্গের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, নয়া সংসদ ভবন তৈরির সময় সেই বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। লোকসভা, রাজ্যসভা থেকে শুরু করে সংবিধান হল বা আর্ট গ্যালারি – সমস্ত জায়গাতেই বিশএষভাবে সক্ষমদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই সকল প্রযুক্তিগত সুবিধার জোরেই ভারতের নয়া সংসদ ভবনটি বিশ্বের সকল সংসদ ভবনের মদ্যে অদ্বিতীয় করে তুলেছে।