পটনা : নীতীশ কুমারের ‘ভয়ের’ কারণেই আজ বিহারের রাজনীতির এই হাল। সূত্রকে উদ্ধৃত করে এমনই দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। সর্বভারতীয় একটি সংবাদ চ্যানেল দাবি করেছে যে উদ্ধব ঠাকরের উদাহরণ দেখে চিন্তিত নীতীশ কুমার। এই বিষয়ে নীতীশের দলের বর্ষীয়ান নেতা উমেশ কুশওয়াহা বলেন, ‘নীতীশ কুমারের উদ্বেগ ভিত্তিহীন বা অমূলক নয়। কয়েকদিন আগেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা বললেন যে দেশে আর কোনও আঞ্চলিক দল থাকবে না। কিন্তু বিজেপির তো আমাদের মতো সঙ্গী দল রয়েছে যারা আঞ্চলিক।’ তাঁর দাবি, জেপি নড্ডার এই উক্তি প্রমাণ করে যে বিজেপি প্রথমে নিজের সঙ্গী দলের ক্ষমতা খর্ব করতে চায় এবং এরপর তাদের শেষ করে দেয়।
সূত্রের দাবি, নীতীশের ভয়, বিহার পরবর্তী মহারাষ্ট্র হতে চলেছে। যেভাবে সেই রাজ্যে উদ্ধবকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে, এখানেও নীতীশকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। উল্লেখ্য, একদা বিহারে নীতীশের জেডিইউ ছিল ‘সিনিয়র পার্টনার’। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ‘বড় দাদা’ হয়ে ওঠে। একই ঘটনা ঘটেছিল মহারাষ্ট্রে। সেখানে বিজেপি শিবসেনার থেকে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল ২০১৯ সালে। সেই সময় উদ্ধব বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙেছিলেন। তবে বিহারে ২০২০ সালে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করে জোট অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। তবে কম বিধায়ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হলেও জোটসঙ্গী বিজেপির সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বেড়েছে নীতীশের। সম্পর্কের চিড় প্রকাশ্যে এসেছে আরসিপি সিংকে রাজ্যসভার টিকিট দেওয়া নিয়ে। একদা নীতীশের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আরসিপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। তবে তাঁকে এবার রাজ্যসভার টিকিট দেয়নি জেডিইউ। এর জেরে তিনি মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করতে বাধ্য হন। মনে করা হচ্ছে, আরসিপি সিংয়ের বিজেপি ঘনিষ্ঠতার কারণেই নীতীশ কুমার তাঁকে টিকিট দেননি। এদিকে নীতীশ আরসিপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই আবহে আরসিপি জেডিইউ ছেড়ে নীতীশকে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছেন। এই গোটা পর্বে বিজেপির ইন্ধন রয়েছে বলে মত জেডিইউ-র একাংশের।
উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রে উদ্ধবের পতনের নেপথ্যে ছিলেন তাঁরই দলের এক বর্ষীয়ান নেতা – একনাথ শিন্ডে। সূত্রের দাবি, নীতীশের আশঙ্কা, তাঁরই দলের কাউকে দিয়ে তাঁকেও ক্ষমতাচ্যুত করার ছক কষতে পারে গেরুয়া শিবির। এদিকে অমিত শাহকে নিয়েও নাকি ‘অসন্তুষ্ট’ নীতীশ। নীতীশ নাকি মনে করছেন তাঁর সরকারে এমন সব মন্ত্রী আছেন যারা অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ। এই কারণেই নিজেরই দলের আরসিপি সিংয়ের বিরুদ্ধে চলে যান নীতীশ। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, আরসিপি দলে থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে আরসিপি নিজের দলের বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন। তিনি জেডিইউর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পর্যন্ত করেন। এই আবহে নীতীশের ঘনিষ্ঠ তথা জেডিইউর সর্বভারতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন সিং সরাসরি বিজেপিকেই দোষারোপ করেছেন আরসিপি পর্বের জন্য। তিনি অভিযোগ করেন, আরসিপি যা বলছেন তা বিজেপির শেখানো। এমনকি তিনি দাবি করেন, আরসিপি সিং ২০১৯ সালে অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রী হয়েছিলেন। এবং তাই নীতীশ সেই সময় আপত্তি করেননি। এই আবহে বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জেডিইউর কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকবে না বলে জানিয়েছেন রাজীব রঞ্জন। এর আগে গতকাল প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে নীতি আয়োগের বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন নীতীশ। এই সব কিছু মিলিয়ে বিহারে বিজেপি-জেডিইউ জোটে ভাঙনের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই।