পটনা : বিষ মদে একের পর এক মৃত্যু। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল নীতীশ কুমারের সরকারের ভূমিকা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছিল বিহার মদ নিষিদ্ধকরণ নীতির যৌক্তিকতা নিয়ে। বিরোধীরা তো বটেই, এমনকী জোটসঙ্গী বিজেপিও আঙুল তুলতে শুরু করেছিল নীতীশের দিকে। চাপের মুখে এবার মুখ খুললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। কারও নাম করলেন না। অথচ বিরোধীদের পাশাপাশি বন্ধু বিজেপিকেও যেন বার্তা দিয়ে রাখলেন। বললেন, “কেউ কেউ মদ নিষিদ্ধকরণ নীতি প্রসঙ্গে আমার বিরোধিতা করছেন।”
বিহারে এখন নীতীশের একার রাজ হারিয়েছে। জোটসঙ্গী বিজেপির কাঁধের উপর কিছুটা ভর করেই শেষবার সরকার গঠন করেছেন। তাই জোটসঙ্গীদের কিছুটা সমঝে চলতে হয় নীতীশকে। কিন্তু বিহারে নীতীশের ‘খারাপ সময়ে’ বন্ধু বিজেপির এ হেন বিষ মদ খোঁচা যে মোটেই ভাল ভাবে দেখছেন না তিনি, তা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আগামিকাল, ১৬ নভেম্বর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন। কীভাবে মদ নিষিদ্ধকরণ নীতিকে আরও জোরদার করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা হতে পারে ওই বৈঠকে। উল্লেখ্য, বিহারে বিগত কিছুদিনে ৬০ জনের বেশি মানুষ বিষ মদ পান করে মারা গিয়েছেন।
মদ নিষিদ্ধকরণ নীতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের ঠিক একদিন আগে নীতীশ কুমার ফের একবার স্পষ্ট করে দিলেন, মদ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত একবারে সঠিক ছিল। বললেন, “মদের উপর নিষেধাজ্ঞায় অনেকেই খুশি নন। ব্যক্তিগত মতামত থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের কথা শুনেছি, মহিলাদের কথা শুনেছি, পুরুষদেরও একটি বড় অংশের কথা শুনেছি। বেশিরভাগ মানুষই মদ্যপানের বিরোধী। আমরা বাপুর (মহাত্মা গান্ধী) নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি যেমন বলেছিলেন, আমরা তেমনটা রূপায়ন করেছি।”
পাশাপাশি তিনি এও স্মরণ করিয়ে দেন যে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েই এই নিয়ম কার্যকর হয়েছিল। যাঁরা আজ নীতীশের মদ নিষিদ্ধকরণ নীতির বিরোধিতা করছেন, তাঁদের উদ্দেশে তিনি বলেন,”ওনারা কি ভুলে গিয়েছেন যে সবার সম্মতি নিয়েই এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছিল? শাসক হোক বা বিরোধী… কোনও দল কি সেই সময় বিরোধিতা করেছিল?”
এই বিষ মদ কাণ্ডে যখন একের পর এক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্য়ে আসছে, তখন নীতীশ কুমারকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “আপনি যদি খারাপ জিনিস পান করেন, তাহলে আপনি মারা যাবেন।” আর এই মন্তব্যেই প্রচুর সমালোচনা করেছিল বিরোধীরা। আরজেডি প্রধান তথা বিহার বিধানসভা বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ঘটনায় দায় নেওয়া কিংবা মদ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে বিহারবাসীকে ভয় দেখাচ্ছেন।
প্রশ্ন তুলেছে বিজেপিও। বিহারের বিজেপি সভাপতি তথা লোকসভা সাংসদ সঞ্জয় জয়সওয়াল এই পর্যালোচনায় বসার ‘পরামর্শ’ দেন নীতীশের সরকারকে। নীতীশের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়ে তাঁর বক্তব্য, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া রাজ্যে বেআইনি মদ বিক্রি করা সম্ভব নয়।
২০১৬ সালে বিহারে মদ্যপানের উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা নীতীশ কুমারের আমলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে একটি। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে মদের জন্য ব্যয় করা অর্থ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা যেতে পারে। নীতিটি প্রাথমিকভাবে তাঁকে ভোটবাক্সে প্রচুর সুবিধা দিয়েছিল। বিশেষ করে বিহারে জাত-পাতের সীমানা পেরিয়ে তাঁর এই নীতি বিহারের মহিলাদের কাছে প্রচুর সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।