নয়া দিল্লি: একটা জাল স্ক্রিনশট! তার জেরেই বাতিল করা হয়েছে ইউজিসি-নেট পরীক্ষা ২০২৪। গত ১৮ জুন দেশের ৩১৭টি শহরে ৯ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার একদিন পরই এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে জানিয়ে পরীক্ষা বাতিল করেছিল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। তারপর, এই ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছিল সিবিআই-কে। সিবিআই-এর তদন্তেই জানা গিয়েছে, আদতে ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসই হয়নি। এই পরীক্ষা দুটি সেশনে নেওয়া হয়। প্রথম অধিবেশন ছিল সকাল ৯.৩০ টা থেকে ১২.৩০ পর্যন্ত। পরের সেশন ছিল বিকেল ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রথম সেশনের পরীক্ষার পর, সেই প্রশ্নপত্রটি পরীক্ষার দিন দুপুর ২টো নাগাদ একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে ইউজিসি-নেট প্রশ্নপত্রের একটি স্ক্রিনশট ফাঁস করা হয়। ওই স্ক্রিনশটটিতে এমনভাবে কারিকুরি করা হয়েছিল যাতে মনে হয় সকালের পরীক্ষার আগেই সেটি ফাঁস হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার ওই টেলিগ্রাম চ্যানেলের চ্যাটটি সনাক্ত করেছিল। ১৯ জুন বিকেল ৩টে নাগাদ তারা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে জানায়। ওই রাতেই সরকার পরীক্ষাটি বাতিল বলে ঘোষণা করেছিল। ২৩ জুন, শিক্ষা মন্ত্রকের অনুরোধে, এই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিল সিবিআই। সিবিআই তদন্তে জানা গিয়েছে, এর পিছনে একটি জালিয়াতি চক্র জড়িয়ে রয়েছে। যারা পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নামে টাকা তুলে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে। তারাই, একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ইউজিসি নেট পরীক্ষার প্রথম সেশনের ঠিক পরে ওই প্রশ্নপত্রটি সংগ্রহ করেছিল। এরপর, দ্রুত তাতে কারসাজি করে, দুপুর ২টো নাগাদ টেলিগ্রাম চ্যানেলে সেই প্রশ্নপত্রের একটি ছবি শেয়ার করেছিল। তাদের কাছে আগেই প্রশ্নপত্র এসে গিয়েছিল দেখিয়ে, তারা ভবিষ্যতের প্রতারণার ফাঁদ পাততে চেয়েছিল।
ইতিমধ্যেই, সিবিআই এই তথ্য শিক্ষা মন্ত্রককে জানিয়েছে। তবে, ইউজিসি-নেট পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে কিনা, সেই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। যে স্ক্রিনশটের জেরে পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছিল, তা যে জাল তা নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই। ইতিমধ্যেই ২১ অগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও একদিন এই পরীক্ষা ফের নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ। এখনও পর্যন্ত এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করেনি সিবিআই। তবে, যে যুবক টেলিগ্রামে ওই প্রশ্নপত্রের জাল স্ক্রিনশটটি ছড়িয়েছিল, তাকে সিবিআই গ্রেফতার করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সূত্রের মতে, টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে যে সকল বার্তা আদান-প্রদান করা হয়েছিল, তা বিশ্লেষণ করে এবং সেগুলির ‘ডিজিটাল ট্রেইল’ ধরেই এই মামলার সমাধান করেছে সিবিআই। শিগগিরই এই মিমলার রিপোর্ট দাখিল করতে পারে তারা।
প্রসঙ্গত, জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ, সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ এবং ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিতে পিএইচডিতে ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় এই পরীক্ষার মাধ্যমে।