নয়ডা: রবিবার, গোটা ভারত প্রত্যক্ষ করেছে এক ইতিহাস, সবথেকে বড় মাপের নিয়ন্ত্রিত ধ্বংস! মাত্র ৯ সেকেন্ডে ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে নয়ডায় অবস্থিত টুইন টাওয়ার। ধ্বংসের আগে, এমারেল্ড কোর্ট সোসাইটির বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যার জন্য গত এক মাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আবাসনের বাসিন্দারা শুক্রবার থেকেই বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছিলেন। যারা কাছাকাছি কোনও এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁদেরও বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রবিবার সকাল সাতটার মধ্যে। সবাইই সেই নির্দেশ মেনেছিলেন, শুধু একজন বাদে। জানা গিয়েছে, তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন, আজই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। নিজের বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলেন তিনি!
এমারল্ড কোর্টে মোট ১৫টি আবাসিক ভবন রয়েছে। প্রতিটিতে ৪৪টি করে অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। মোট বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ২,৫০০ জন। গাড়ি রয়েছে ১,২০০টি। প্রত্যেক বাসিন্দাকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হাউজিং সোসাইটিটির সাতজন সদস্যকে নিয়ে একটি স্পেশাল টাস্কফোর্স তৈরি করা হয়েছিল। টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন গৌরব মেহরোত্রা নামে এক বাসিন্দা। এছাড়া বাকিদের মধ্যে ভারতীয় সেনার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এবং বায়ুসেনার একজন অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ছিলেন। এই স্পেশাল টাস্কফোর্স ছাড়াও, সোসাইটির ১৫টি টাওয়ারের প্রতিটির জন্য একজন করে ‘ক্যাপ্টেন’ ছিলেন। যাঁদের দায়িত্ব ছিল তাঁদের ভবনের সকলের নিরাপদে সরে যাওয়া নিশ্চিত করা।
এদিন, সকাল ৭টার মধ্যে, শিশু এবং প্রবীণ নাগরিক-সহ প্রায় সমস্ত বাসিন্দাকেই সোসাইটির স্পেশাল টাস্ক ফোর্স নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সকাল ৭টা বেজে যাওয়ার বেশ কিছু পরে, এক নিরাপত্তারক্ষী দৌড়তে দৌড়তে এসে টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, একটি টাওয়ারের একেবারে উপরের তলার অ্যাপার্টমেন্টটি সম্ভবত খালি হয়নি। সেখানে এক ব্যক্তি মনে হয় থেকে গিয়েছেন! এরপর ফের সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। দেখা যায়, এক ব্যক্তি ভিতরে অঘোরে ঘুমোচ্ছেন। এরপর, নিরাপত্তারক্ষীরাই বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় কোনওভাবে তাঁকে জাগিয়ে তোলেন। তাঁকে দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের তিনি জানান, এদিনই যে টুইনটাওয়ার ভাঙা হবে, তা তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য নরেশ কেশওয়ানি বলেছেন, “সকল অ্যাপার্টমেন্ট খালি হয়েছে কি না, তা আমরা দুবার করে যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই কারণেই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছিলাম। দেখা গিয়েছিল, টাওয়ারের সমস্ত বাসিন্দাদের মধ্যে মাত্র একজন বাড়ি ছাড়েননি। ওই বাসিন্দা, অ্যাপার্টমেন্টের ভিতরে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। বাড়ি ছাড়ার শেষ সময়সীমা ভুলে গিয়েছিলেন। কোনভাবে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে জাগিয়ে তোলেন এবং তাঁকেও সকাল সাতটার কিছু পরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।”
নরেশ কেশওয়ানি আরও জানিয়েছেন, তাঁদের বিশেষ টাস্ক ফোর্স বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিন্তাভাবনা করেছিল। তাঁরা দুবার করে যাচাইয়ের একটা প্রক্রিয়া করেছিলেন। বাড়ি ছাড়া সম্পর্কিত সমস্ত নির্দেশিকা-সহ একটি স্টিকার দেওয়া হয়েচিল প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টে। বাসিন্দাদের বলা হয়েছিল, বাড়ি তালাবদ্ধ করে চলে যাওয়ার সময় সেই স্টিকার দরজায় গায়ে সাঁটিয়ে গিয়ে যেতে। আর প্রত্যেক টাওয়ার ক্যাপ্টেনের কাছে বাসিন্দাদের বিশদ বিবরণের একটি রেজিস্টার ছিল। সকাল সাতটার পর, প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় দরজায় গিয়ে রেজিস্টারের স্টিকার মিলিয়ে দ্বিতীয় দফার যাচাই করেন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করাতেই ওই ঘুমন্ত ব্যক্তিকে সময়মতো শনাক্ত করা গিয়েছিল বলে দাবি করেছেন নরেশ কেশওয়ানি।