বছর শেষে করোনার নয়া আতঙ্ক বিশ্বজুড়ে। দেশ তথা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন সংক্রমণ। দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬০-এ বেড়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বেও শতাধিক দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের তরফে সমস্ত রাজ্যগুলিতে বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছ। গতকাল ওমিক্রন পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওমিক্রন রোধে কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও ওমিক্রন রুখতে বুস্টার ডোজ়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। করোনা ও ওমিক্রন সংক্রান্ত যাবতীয় আপডেট দেখে নিন একনজরে-
শুক্রবার রাজ্যে মোট ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন দুই জন। এই নিয়ে রাজ্যে মোট ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ছয়। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবার মোট ২৩ টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সের রিপোর্ট এসে পৌঁছেছে রাজ্যের হাতে।
ওমিক্রনের হাত ধরেই কি এবার দেশে গুটি গুটি পায়ে ঢুকে পড়বে করোনার তৃতীয় ঢেউ? অন্তত এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছেন কানপুর আইআইটির গবেষকরা। তাঁদের মতে, ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে করোনার সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছে যেতে পারে। তবে তৃতীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাসটি এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ওমিক্রনের কারণে অনেক দেশে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখা গিয়েছে। ভারতেও সেই ট্রেন্ড দেখা যেতে পারে, সেই ধারনার ভিত্তিতে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
গোটা বিশ্ব বর্তমানে করোনার এক চতুর্থ ঢেউয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক একবার মুখ থেকে নামলেই তার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। দেশবাসীকে সতর্ক করল কেন্দ্র। বিশেষ করে বড়দিন এবং বর্ষবরণের উৎসবে যাতে করোনা বিধিতে এতটুকুও খামতি না পড়ে, তা নিয়েও সতর্ক করা হয়েছে। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ দেশের সাধারণ নাগরিকদের ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এখন না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে কোভিড -১৯-উপযুক্ত আচরণবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জোর দিয়েছেন দ্রুত টিকাকরণের উপরেও।
ওমিক্রন থাবা বসাতেই ফের নৈশকালীন কারফিউয়ের পথে ফিরছে একের পর এক রাজ্য। হরিয়ানা তাতে তৃতীয় সংযোজন। শুক্রবার রাত থেকেই চালু হয়ে যাচ্ছে ওমিক্রনের কড়াকড়ি। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত রাত ১১ টা থেকে ভোট ৫ টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরোনো যাবে না। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর শুক্রবার আরও জানিয়েছেন, ১ জানুয়ারি থেকে মল, রেস্তরাঁ, ব্যাঙ্ক, সবজি মান্ডি, খাদ্য শস্যের বাজার এবং অফিসগুলিতে প্রবেশের জন্য অবশ্যই লাগবে জোড়া টিকার শংসাপত্র। একসঙ্গে ২০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে একসঙ্গে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও কড়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী করোনা পর্যালোচনা বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
ওমিক্রন আতঙ্কে কাঁপছে দেশ। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। বর্তমান কোভিড -19 পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে 25 ডিসেম্বর থেকে আহমেদাবাদ, ভাদোদরা, সুরাট, রাজকোট, ভাবনগর, জামনগর, গান্ধীনগর এবং জুনাগড়ে প্রতিদিন রাত ১১ টা থেকে সকাল ৫ টা পর্যন্ত নাইট কার্ফু বলবৎ থাকবে, এমনটাই জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর
করোনা ও করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয়েছিল, ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও সেই একই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনে সংক্রমণের পরিমাণ খুবই কম এবং ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও কম বলেই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ।
জাপানের নিয়ন্ত্রকরা শুক্রবার মার্ক অ্যান্ড কো ইনক্ দ্বারা তৈরি কোভিড-১৯ অ্যান্টিভাইরাল পিল অনুমোদন করেছে। জাতীয় সংবাদ সংস্থা এনএইচকে এমনটাই জানিয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আগেই ঘোষণা করেছিলেন দ্রুত এই পিলকে অনুমোদন দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, সারা দেশের জরুরি ভিত্তিতে ২ লক্ষ পিল সরবরাহ করা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এবং হংকং ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, যে ওমিক্রনের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনের উদ্বেগজনক সংখ্যক পরিবর্তন যা বর্তমান ভ্যাকসিন এবং থেরাপিউটিক অ্যান্টিবডিগুলির কার্যকারিতার জন্য বড় বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ১১৪ জন এখনও অবধি ওমিক্রনকে জয় করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। মূলত ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে এখনও অবধি ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এখনও অবধি ৮৮ জন এ রাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি। ৬৭ জন ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছেন রাজধানীতে। তেলেঙ্গানায় এই সংখ্যাটা ৩৮। তামিলনাডুতে ৩৪। কর্নাটকে ৩১ জন আক্রান্ত, গুজরাটে ৩০ জন। কেরলে ২৭, রাজস্থানে ২২। এছাড়াও হরিয়ানা ও ওড়িশায় ৪ জন করে ওমিক্রনের শিকার হয়েছেন। জম্ম কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ৩। এরপরই রয়েছে অন্ধ্র প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ। ২ জন করে ওমিক্রন আক্রান্ত হন এই দুই রাজ্যে। পাশাপাশি চণ্ডীগঢ়, উত্তরাখণ্ড, লাদাখে ১ জন করে ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।
ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই গোটা দেশের সার্বিক করোনাগ্রাফে সামান্য পরির্বতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৬৫০ জন। গতকাল সেই সংখ্যাটা ছিল ৭ হাজার ৩৯৪ জন। যা গতকালের তুলনায় এক হাজার কম। একদিনে করোনার বলি হয়েছেন ৩৭৪ জন।
বিস্তারিত পড়ুন: Corona Virus: চলতি মাসে হাজার ছাড়াল মহারাষ্ট্রের সংক্রমণ, দেশে একদিনে সামান্য কমল দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা
ওমিক্রন আতঙ্কের মাঝেই করোনা রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নিল উত্তর প্রদেশ সরকার। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের রাত থেকেই রাজ্যজুড়ে নাইট কার্ফু জারি করার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, কোনও অনুষ্ঠান বা বিয়েতে ২০০ জনের বেশি লোক উপস্থিত থাকতে পারবেননা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ নিয়েছেন, ক্রেতার মাস্ক না থাকলে দোকানদাররা যেন কোনও পণ্য না দেন।
গঙ্গাসাগর মেলার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি প্রশাসনের। কোভিডকালে কীভাবে সংক্রমণ প্রতিহত করা যায় সেদিকেই বিশেষ নজর রাজ্য সরকারের। পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের পুণ্য অর্জনে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে প্রশাসনের। ওমিক্রন উদ্বেগেই গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতিকে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। কোভিডকালে কীভাবে সংক্রমণ রোখা যায়, সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আপাতত, ‘পুণ্য অর্জনে’ ই-স্নানেই জোর দিচ্ছে প্রশাসন। কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স এমনকী দাহঘাটের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে গঙ্গাসাগরে।
আগামী বছরের শুরুতেই ৫ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ওমিক্রন আতঙ্কে কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশনকে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ওমিক্রন আতঙ্কের মাঝেই এবার মধ্য প্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ক্রমেই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ওমিক্রন। দেশে ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫৮ অতিক্রম করেছে। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা গিয়েছে, এখনও অবধি দেশের ১৭ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে থাবা বসিয়েছে করোনার নয়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। গতকাল ওমিক্রন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওমিক্রন রোধে কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি দেশে জেলাভিত্তিক নজরদারি চালানোর জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।