নয়া দিল্লি: রাত পোহালেই ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস। তার আগে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি বলেন, “প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করার সময় আমরা দেশ হিসেবে একসঙ্গে যা অর্জন করেছি তা উদযাপন করি।” সংবিধান রচনায় বিআর আম্বেদকর এবং বিএন রাউয়ের অবদান তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতার মতো ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যের প্রশংসা করেন তিনি। পাশাপাশি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগেরও প্রশংসা করেছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এটা গণতন্ত্র এবং বহুত্ববাদ প্রচারের বড় সুযোগ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, দেশবাসীকে কী বার্তা দিলেন রাষ্ট্রপতি –
ড. বি আর আম্বেদকর
রাষ্ট্রপতি মুর্মু বলেন, ভারত সর্বদাই সংবিধানের খসড়া কমিটির প্রধান ডক্টর বিআর আম্বেদকরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। সংবিধানকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের আইনজ্ঞ বি এন রাউ-এর ভূমিকাও মনে রাখা উচিত। তিনিই সংবিধানের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছিলেন।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে সফল ভারত
ধর্ম এবং ভাষার ভিন্নতা আমাদের বিভক্ত করেনি, ঐক্যবদ্ধ করেছে। আর সেই কারণেই ভারত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে সাফল্য পেয়েছে।
পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি
গত বছর ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার বৈশ্বিক পটভূমিতে ভারত এই সাফল্য অর্জন করেছে। দক্ষ নেতৃত্ব এবং কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা দ্রুত মন্দা থেকে বেরিয়ে এসেছি এবং আমাদের উন্নয়নের যাত্রা ফের শুরু হয়েছে। দরিদ্র এবং অশিক্ষিত দেশ থেকে ভারত এখন বিশ্বমঞ্চে এক আত্মবিশ্বাসী দেশে পরিণত হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্য
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা যে সাফল্য পেয়েছি তাতে গর্ব বোধ হয়। মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, ভারত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির অন্যতম। ভারতীয় মহাকাশচারীদের মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার জন্য গগনযান কর্মসূচি চলছে।
আত্মনির্ভর ভারত ও মহিলাদের ক্ষমতায়ন
দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিগুলির অন্যতম ভারত। সরকারের সময়মত হস্তক্ষেপের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগ, ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে মানুষের মধ্যে। মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতা এখন আর নিছক স্লোগান নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই ক্ষেত্রে আমাদর ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। নিসন্দেহে মহিলারাই আগামী দিনে ভারত গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেবে।
ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব
গণতন্ত্র ও বহুপাক্ষিকতাকে উন্নীত করার একটি দারুণ সুযোগ ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব। একটি উন্নত বিশ্ব ও একটি উন্নত ভবিষ্যত গঠনের ফোরাম এটি। আমি নিশ্চিত, ভারতের নেতৃত্বে, জি২০ আরও ন্যায়সঙ্গত ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
নাগরিকদের প্রশংসা
কৃষক, শ্রমিক, বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মিলিত শক্তি আমাদের দেশকে ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান, জয় অনুসন্ধান’-এর চেতনায় গড়ে তুলেছে। যারা দেশের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন, সেই সকল নাগরিকদের প্রশংসা করি।
বিশেষ প্রশংসা সৈন্যদের
প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে, আমি আমাদের জওয়ানদের আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁরা আমাদের সীমান্ত রক্ষা করেন এবং দেশের জন্য যে কোনও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। আধাসামরিক বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সমস্ত সাহসী সদস্যদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।