নয়া দিল্লি: সোমবার থেকে সংসদে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। আজ অধিবেশনের তৃতীয় দিন। তবে প্রথম দিন থেকেই শাসক-বিরোধীদের দলের হই হট্টগোলে বারবার মুলতুবি হয়েছে লোকসভার অধিবেশন। মূলত ভারতীয় গণতন্ত্র নিয়ে লন্ডনে রাহুল গান্ধীর মন্তব্যে উত্তপ্ত হয়েছে সংসদের দুই কক্ষই। সরকারের তরফে রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আর নিজের অবস্থানেও অনড় কংগ্রেস। পাল্টা বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগ ও আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যু নিয়ে সুর চড়িয়েছে। বাজেট অধিবেশনের তৃতীয় দিনের গুরুত্বপূর্ণ আপডেট এক নজরে দেখে নিন এখানে-
শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির অভিযোগে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কাছে আবেদন জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতারা। ইডিকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, জেডিইউ, এসএস, আরজেডি, ডিএমকে, জেএমএম, আপ, আইইউএমএল, ভিসিকে, কেরল কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীদের প্রধানরা।
রাহুল গান্ধীর থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে হই হট্টগোলে আগামিকাল সকাল ১১ টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্য়সভা ও লোকসভা।
রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলের ২০০ জন সাংসদ এবং আদানি ইস্যুর তদন্তে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য ইডি অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের জোর করে বাধা দেয়। আমরা সংসদে ফিরে যাচ্ছি এবং সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে প্রতিবাদ করব।’ তিনি জানিয়েছেন, পুলিশি বাধায় বেশ কয়েকজন সাংসদ সংসদে ফিরে আসেন।
বিরোধীদের ইডি অভিযান সফল হয়নি। মাঝ পথেই পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে, ব্যারিকেড করে বিরোধীদের এই অভিযান রুখে দেয়।
বিরোধীদের অভিযানের মুখেই ১৪৪ ধারা জারি করেছে দিল্লি পুলিশ। বিজয় চকে পুলিশ ঘোষণা করে, বিরোধী সাংসদরা আর এগোতে পারবেন না। কারণ ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
দিল্লিতে ইডি দফতরের উদ্দেশে অভিযান শুরু বিরোধী দলগুলির। দিল্লির রাজপথে পুলিশ-সাংসদদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। তবে এই অভিযানেও নেই তৃণমূল। যোগ দেয়নি এনসিপিও। মিছিলে রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও। মিছিল থেকে ‘জেপিসি’ স্লোগান ওঠে। অধীর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার জেপিসির দাবি মেনে নিলে বিজেপির আসল চেহারা সাধারণ মানুষের সামনে বেরিয়ে আসবে। বিজেপির সব দুর্নীতি মানুষের সামনে প্রমাণিত হয়ে যাবে। তাই তাঁরা চান না জেপিসি গঠন হোক। তবে তাঁরা যখন বিরোধী ছিলেন তখন জেপিসির দাবি করতেন।”
রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতেই হবে। এই দাবি নিয়ে ফের হই হট্টগোল সংসদের দুই কক্ষেই। এই তুমুল অশান্তির মধ্য়ে দুপুর ২ টো অবধি মুলতুবি হয়ে গেল লোকসভা ও রাজ্যসভা অধিবেশন।
আদানি ইস্যুতে ইডি দফতর অবধি অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দলগুলি। একাধিক বিরোধী দল আজ সাড়ে ১২ টা নাগাদ সংসদ ভবন থেকে ইডির অফিসে যাবে। এবং সেখানে আদানি ইস্য়ুতে একটি অভিযোগপত্র জমা দেবেন বিরোধী দলের নেতারা। বিরোধী দলের অনেক সাংসদই এই অভিযানে যোগ দেবেন।
আজ বিদেশ থেকে ফিরলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। আজ সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন তিনি।
এলপিজি গ্যাসের দামবৃদ্ধি নিয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এই প্রতিবাদে অন্য কোনও বিরোধী দলকে পাশে না রাখার বিষয়ও জানানো হয়েছে স্পষ্টভাবে। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে সংসদ অধিবেশন শুরু হতে পারছে না। ক্ষমতাসীন দল হোক বা প্রধান বিরোধী দল, উভয়ই একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত।” তিনি আরও বলেন, “আমরা অন্য কোনও বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছি না। তৃণমূল সংসদে নিজস্ব ইস্যু এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবাদ করবে। আমাদের রাজ্যে কংগ্রেস পুরোপুরি বিজেপি ও সিপিএম-র সঙ্গে যোগসাজশ করছে, তাই আমরা কংগ্রেস নেতাদের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে পারি না।”
সংসদে গান্ধী মূর্তির সামনে ধর্নায় তৃণমূল কংগ্রেস। আদানি ও কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে ধর্না প্রদর্শন করেন তৃণমূল সাংসদরা। বিরোধীদের সঙ্গে নয়, আলাদাভাবেই ধর্নায় তৃণমল কংগ্রেস।
আজও বিরোধীদের বৈঠকে গরহাজির তৃণমূল। আদানি ইস্যুতে শাসক দলকে কোণঠাসা করতে ব্লু প্রিন্ট তৈরিতে ১৮ টি বিরোধী দল বৈঠকে বসে। তৃণমল সেই বৈঠকে যোগ দেয়নি বলে জানা গিয়েছে। গত দু’দিনের বৈঠকেও গরহাজির ছিল তৃণমূল। তাহলে কি বিরোধী ঐক্যে চিড় ধরল? উঠছে প্রশ্ন।
সংসদে ঢোকার মুখে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নিজের মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তিনি উল্টে যাঁরা ক্ষমা চাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫-৬ টি দেশে গিয়েছেন। এবং আমাদের দেশের জনগণকে সেখানে ছোটো করেছেন। এবং তিনি বলেছিলেন, ভারতে জন্ম নেওয়া পাপ। বাক স্বাধীনতা এখানে খর্ব হচ্ছে। সত্যি কথা বললে কারাবাস হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের সমাপ্তি নয়তো কী?” তিনি আরও বলেছেন, “এই কারণে আমরা ক্ষমা চাইব না। আমরা তাঁদের জিজ্ঞাসা করব যে আপনি অনেক দেশে গিয়ে এখানকার মানুষের সংস্কৃতি ও মানবতাকে অপমান করেছেন। তিনি (রাহুল গান্ধী) শুধু গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন। মানুষ যখন বিতর্কে অংশগ্রহণ করে, তখন তারা তাদের মতামত প্রকাশ করে।”
শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচারসহ দুর্নীতির অভিযোগে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কাছে আবেদন জানিয়েছেন বেশ কয়েকটি বিরোধী দলের নেতারা। ইডিকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কংগ্রেস, সিপিআই, সিপিএম, জেডিইউ, এসএস, আরজেডি, ডিএমকে, জেএমএম, আপ, আইইউএমএল, ভিসিকে, কেরল কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধীদের প্রধানরা।