Kuber Tila myth and history: মোদী গেলেন ‘কুবের টিলা’য়, জড়িয়ে আছে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের ইতিহাস
Kuber Tila myth and history: কুবের টিলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী। রয়েছে এক সম্বৃদ্ধ ইতিহাসও। যা ভারতের হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অন্যতম প্রতীকও বটে। বস্তুত, এই টিলা সাক্ষী ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের। যে যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হাত মিলিয়েছিল হিন্দু ও মুসলমানরা।
অযোধ্যা: সোমবার (২২ জানুয়ারি), অযোধ্যার রাম মন্দিরে ‘প্রাণ প্রতিস্থা’র পর, মন্দির থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত কুবের টিলা পরিদর্শন করেন। সেখানকার শিব মন্দিরে পুজোও দেন তিনি। এই কুবের টিলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী। রয়েছে এক সম্বৃদ্ধ ইতিহাসও। যা ভারতের হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অন্যতম প্রতীকও বটে। বস্তুত, এই টিলা সাক্ষী ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের। যে যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে হাত মিলিয়েছিল হিন্দু ও মুসলমানরা। রাম জন্মভূমি মন্দির চত্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই টিলায় শিবের একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে। সম্প্রতি মন্দিরটির সংস্কার করা হয়েছে, রামায়ণে বর্ণিত ‘জটায়ু’-র একটি ব্রোঞ্জ মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে ঐতিহাসিক কুবের টিলায়।
এই টিলার নামকরণ করা হয়েছে সম্পদের দেবতা কুবেরের নামে। কিংবদন্তি অনুসারে, এই টিলায় এসেছিলেন কুবের এবং তিনিই প্রথম সেখানে রামের পূজা করেছিলেন। রামের জন্মস্থানের কাছে একটি শিবলিঙ্গও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। যাকে কেন্দ্র করেই এই প্রাচীন শিব মন্দির তৈরি হয়েছে। পরে সেখানে কুবের, গণেশ, পার্বতী-সহ নয় দেব-দেবীর মূর্তিও স্থাপন করা হয়। তাই একে ‘নবরত্ন’ও বলা হয়। এই ধর্মীয় মাহাত্মের পাশাপাশি কুবের টিলার ঐতিহাসিক গুরুত্বও অসীম।
১৮৫৭ সালের ৩০ জুন, কুবের টিলা এলাকাতেই হয়েছিল চিনহাটের যুদ্ধ। ঐক্যবদ্ধভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল ২২ বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির হিন্দু, মুসলিম এবং শিখ সদস্যরা। এই চিনহাটের যুদ্ধই স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ হিসাবে পরিচিত। এই যুদ্ধে হিন্দুরা শিবের ছবি দেওয়া পতাকা এবং মুসলিমরা ইসলামী পতাকা নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন হেনরি লরেন্স। সেই যুদ্ধে জয় পেয়েছিল হিন্দু-মুসলিম ঐক্য বাহিনী। চিনহাটের যুদ্ধ থেকে পাশের ফৈজাবাদেও একই ধরনের বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। সেই যুদ্ধে বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্ট্রি বাহিনী সাধু ও মৌলবীদের কাছ থেকে সরাসরি সমর্থন পেয়েছিল। হনুমানগড়ী মন্দিরের মোহান্ত রামচরণ দাস এবং মৌলবী আমির আলি দুই সম্প্রদায়কে একত্রিত করায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।
হিন্দু-মুসলমানদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে প্রায় এক বছর ব্রিটিশ শাসনের বাইরে ছিল ফৈজাবাদ। থেকে মুক্ত ছিল। তবে ১৯৫৮-র ৩ মার্চ, ব্রিটিশরা লখনউ দখল করে নেয়। কয়েকদিন পর ব্রিটিশদের দখলে যায় ফৈজাবাদও। এক বছর আগের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে, মোহান্ত রামচরণ দাস এবং মৌলবী আমির আলিকে কুবের টিলার এক তেঁতুল গাছে একসঙ্গে ফাঁসি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। এর কয়েক মাস পর, স্থানীয়রা কুবের টিলায় মোহান্ত রামচরণ দাস এবং মৌলবী আমির আলির স্মরণে এক ঐক্যবদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা শুরু করেছিল। তবে, ব্রিটিশরা এই স্মৃতিসৌধে বিপদ দেখেছিল। তারা মনে করেছিল ওই সৌধ দুই সম্প্রদায়ের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের বিরোধিতা দেখে, পণ্ডিত শম্ভু প্রসাদের নেতৃত্বে একদল কৃষক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেছিল। কড়া হাতে সেই বিগ্রোহ দমন করা হয়। সেই বছরেরই নভেম্বরে শম্ভু প্রসাদকেও ব্রিটিশরা ফাঁসি দিয়েছিল।