ওয়াশিংটন ডিসি: ১৯৪৫ সালে জাপানের দুই শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলেছিল আমেরিকা। তারপর আটটি দশক কেটে গিয়েছে। ২০২২ সালে ফের একবার পৃথিবীর বুকে পরমাণু বোমা হামলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে কিয়েভের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল মস্কো। কিন্তু, সেই সংকট কেটেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে এমনটাই জানিয়েছেন জো বাইডেন প্রশাসনের দুই পদস্থ কর্তা। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নয়, বেশ কয়েকটি দেশ সংকট এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই বাইডেন প্রশাসন ভয় পেয়েছিল, রাশিয়া কোনও ট্যাকটিক্যাল বা ব্যাটলফিল্ড পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। এই অবস্থায় তারা বুঝেছিল, রাশিয়াকে তারা সরাসরি বার্তা দিলে, কাজ নাও হতে পারে। তাদের কথা নাও কানে তুলতে পারে মস্কো। তার বদলে, নন-অ্যালাইনমেন্ট মুভমেন্টের দেশগুলি, অর্থাৎ, যারা আমেরিকা বা রাশিয়া – কোনও শিবিরেই নেই, এমন দেশগুলির সাহায্য নিয়েছিল। তাদের দিয়ে রাশিয়াকে পারমাণবিক হামলা করা থেকে নিরুৎসাহ করতে চেয়েছিল। মার্কিন কর্তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং এই ধরনের অন্যান্য দেশের নেতারা, রাশিয়াকে বোঝানোতেই শেষ পর্যন্ত ওই পথে হাঁটেনি মস্কো।
বাইডেন প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, “ভারত কথা বলেছিল, চিন কথা বলেছিল, অন্যরাও কথা বলেছিল। তাতেই রুশদের চিন্তাভাবনায় বদল এসেছিল।” প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে ভারত সবসময় অসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর নিন্দা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বারবার বলেছেন, “এটা সংঘাতের সময় নয়। আলোচনার টেবিলে বসে শান্তিপূর্ণভাবে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।” গত বছর উজবেকিস্তানে আয়োজিত এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সামনাসামনিও তিনি যুদ্ধের রাস্তা থেকে সরে এসে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এমনকি ভারতের সভাপতিকত্বে জি-২০-র পক্ষ থেকেও একই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
তবে, যুদ্ধের শুরু থেকে পুতিন পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছেন। বিশেষ করে পশ্চিমী দেশগুলি এই যুদ্ধে সরাসরি নাক গলালে, পারমাণবিক যুদ্ধ বাঁধতে পারে বলে সতর্কও করেছে ক্রেমলিন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে, ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশ-অধিকৃত খেরসন পুনর্দখলের চেষ্টা করেছিল। একসময় অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, রুশ বাহিনীকে ঘিরে ফেলতে পারত ইউক্রেনীয় বাহিনী। তা হলেই পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দিকে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছিল আমেরিকা। এছাড়াও, রাশিয়া বারবার কিয়েভের কাছে ‘ডার্টি বম্ব’ আছে বলে এক মিথ্যা আখ্য়ান বলে গিয়েছে। সেটা আসলে, রুশ পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি বলে মনে করেছিল আমেরিকা। তবে, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বলছে, রাশিয়া কখনই এই ধরনের হামলা চালানোর জন্য পারমাণবিক বাহিনীকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা করেনি। পুরোটাই ছিল ফাঁকা হুমকি।