তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে এনডিএ। তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকার গঠনের পর শুরু হয়েছে লোকসভার অধিবেশন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর চলছে আলোচনা। সোমবার এই বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সহ একাধিক বিরোধী সাংসদ। মঙ্গলবার ভাষণ শুরু করলেন মোদী।বি
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পরপর তিন বার কংগ্রেস ১০০ আসন পার করতে পারল না। তাঁর বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস হার স্বীকার করলে ভাল করত। আত্মসমালোচনাও করতে পারত।
বিস্তারিত পড়ুন: ‘একশ’তে নয়, ৫৪৩-এর মধ্যে ৯৯ পেয়েছে’, কংগ্রেসকে ‘পরজীবী’ বলে আক্রমণ প্রধানমন্ত্রীর
‘কংগ্রেস রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়েছে মিথ্যা কথাকে। মুখ খুললেই মিথ্যা কথা। গতকালও মিথ্যা কথা বলে সংসদের গরিমা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এটা দেশের অপমান।’, এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী। রাহুল গান্ধী ‘অগ্নিবীর’ প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা ভুল বলে এদিন উল্লেখ করেন মোদী।
কংগ্রেসকে নিশানা করে মোদী বলেন, “কংগ্রেস ফেল হওয়ার বিশ্ব রেকর্ড করেছে। ১০০ তে নয়, ৫৪৩ -এর মধ্যে ৯৯ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেছেন, ১৩টি রাজ্যে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা শূন্য। তাই মানুষের রায় নিয়ে জেতার আনন্দ করো না। মানুষের রায় মেনে নাও, বোঝার চেষ্টা কর।”
কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২৪-এর ভোটে মানুষ কংগ্রেসকে আরও একবার বুঝিয়ে দিয়েছে, ওই বিরোধী আসনেই বসতে হবে। আর তর্ক শেষ হয়ে গেলে চীৎকার করতে থাক। পরপর তিন বার কংগ্রেস ১০০ পার করতে পারল না। কংগ্রেস হার স্বীকার করলে ভাল হত। আত্মসমালোচনা করত। কিন্তু এরা তো শীর্ষাসন করতে শুরু করেছে।”
মোদী বলেন, “তৃতীয়বার আমাদের সরকার তিন গুণ শক্তি দিয়ে কাজ করবে, তিন গুণ গতিতে ছুটবে। তিন গুণ ফল পাবে দেশের মানুষ।” ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সন্ত্রাসবাদ ও কাশ্মীর ইস্যুতে মোদী বলেন, “একসময় নিষ্পাপ মানুষের মৃত্যুর পর মৃত্যু হত। সরকার চুপ করে বসে থাকত। একটা কথা বলারও ক্ষমতা ছিল না। আজকের সরকার ঘরে ঢুকে মেরে আসতে পারে। আজ এয়ার স্ট্রাইক করতে পারে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে পারে। দেশের মানুষকে সন্ত্রাসবাদ থেকে বাঁচাতে সবকিছু করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।”
মোদী বলেন, “২০১৪-র আগে মানুষ নিজেদের ভাগ্যকেই দোষ দিতে শুরু করেছিল। নায্য রেশনও পেত না মানুষ। তারপরই মানুষ আমাদের সেবা করার সুযোগ দেন। এরপর মানুষ বলতে শুরু করেছেন, ভারত এখন সব করতে পারে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের আগে ব্যাঙ্কের টাকাও লুঠ হয়ে গিয়েছিল। তারপর গতি এসেছে দেশের উন্নয়নে।
প্রাক্তন কংগ্রেস সরকারকে নিশানা করে মোদী বলেন, “২০১৪ সালের ওই দিনগুলোর কথা মনে করুন। আমাদের দেশের মানুষের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গিয়েছিল। তাঁরা বলতেন, এই দেশের আর কিছুই হবে না। সব জায়গায় এই কথা শোনা যেত। ভারতীয়দের হতাশা প্রকাশ পেত। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই দুর্নীতির খবর প্রকাশ হত।”
মোদী উল্লেখ করেন, ‘বিকশিত ভারত’ থেকে উপকৃত হচ্ছেন দেশের মানুষ। তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশের বহু মানুষ এই সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। তাঁর কথায়, গোটা বিশ্বের নিরিখে ভারতের শহরও যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেই চেষ্টাই করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তুষ্টিকরণ নয়, আমরা সন্তুষ্টিকরণ করে চলেছি। আর এই সন্তুষ্টিকরণ হল, দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা। সেইজন্যই দেশের মানুষ আমাদের তৃতীয়বার জয় এনে দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ১০ বছর কাজ দেখার পরই ভারতের মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করেছে।
বিরোধীদের স্লোগানের মুখে কটাক্ষ করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আমি কষ্টটা বুঝতে পারি, বারবার মিথ্যা কথা বলার পরও জিততে না পারার কষ্টটা সত্যিই অনেক বেশি।”
বিকেল ৪টেয় জবাবি ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি উঠে দাঁড়াতেই বিরোধী পক্ষের তরফে শোনা যায় স্লোগান। এত শোরগোল শুরু হয়ে যায় যে, যা বার্তা দিয়েও থামাতে পারেননি স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি বিরোধীদের বলেন, “আপনাদের সবাইকে বলার সময় দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে বলতে দিন। এরকম করবেন না।” তারপরও শোরগোল থামেনি সংসদ কক্ষে।