পটনা: নির্বাচনই তাঁর চর্চার বিষয়। নির্বাচনের কোন দল কটি আসন পাবে, তা মিলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। যদিও এখন আর ভোট-কুশলী হিসেবে কাজ করেন না প্রশান্ত কিশোর। বিহারে রাজনীতিবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। তবে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ভোটের বেশ কয়েক মাস আগে চমকে দেওয়া পূর্বাভাস দিলেন তিনি। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে ক্ষমতাচ্যূত করতে, ২৬টিরও বেশি বিরোধী দল তৈরি করেছে ইন্ডিয়া জোট। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের সম্ভাবনা, জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সম্ভাবনা এবং সার্বিকভাবে ভোটের ফল কী হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিলেন প্রশান্ত কিশোর।
ইন্ডিয়া জোটের জন্ম হয়েছিল বিহারেই। জোটের প্রথম বৈঠকটি হয়েছিল পটনাতে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আহ্বানে সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ১৫টি বিরোধী দল। ক্রমে বহরে বেড়েছে জোট। আর জোটে গুরুত্ব কমেছে নীতীশ কুমারের। সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, এমনকি শিবসেনা নেতাদেরও। প্রশান্ত কিশোরের মতে, ২৬ দলের এই জোটে নীতীশ কুমারের বিশেষ গুরুত্ব নেই। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, ইন্ডিয়া জোটে তাঁর গুরুত্ব আরও কমবে। আর বিহারেও তাঁর ভরাডুবি হবে বলেই মনে করছেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর মতে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিহারে ৫টি আসনও জিততে পারবে না জেডি(ইউ)। কাজেই নির্বাচনের পর, ইন্ডিয়া জোটে নীতীশ কুমারের আর কোনও ভূমিকাই থাকবে না।
এক সময় ভোট-কুশলীর কাজ ছেড়ে, নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডি (ইউ) দলেই যোগ দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। তবে, পরবর্তীকালে মতপার্থক্যের জন্য জেডি (ইউ) ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন পিকে। বর্তমানে তিনি বিহার জুড়ে ‘জন সূরজ যাত্রা’ করছেন। সেই যাত্রা এখন সাহেবগঞ্জে রয়েছে। সেখানে এক সভায় তিনি বলেন, “বাংলায় আমি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম। আমি বলেছিলাম বিজেপি ১০০ আসনও পাবে না। আমি আপনাদের সামনে বিহার নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করছি। যাই ঘটুক না কেন, পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমি বলছি, আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেডি (ইউ)-এর ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচজনও জিততে পারবে না। কারণ, নীতীশ কুমারের ভাবমূর্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিহারে জেডিইউর সংগঠন আর নেই। মানুষের মধ্যে দল বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।”
প্রশান্ত কিশোর আরও বলেছেন, বিহারে বারবার রাজনৈতিক শিবির বদলেছেন নীতীশ কুমার। আর তাই, এখন প্রতিটি গ্রামের মানুষ তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। পিকের দাবি, বিহারের মানুষ একসময় নীতীশ কুমারকে ‘সুশাসন বাবু’ বলত। কিন্তু, তারা বুঝে গিয়েছে, নীতীশের একমাত্র অগ্রাধিকার হল যে কোনওভাবে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা। পিকের মতে, ইন্ডিয়া বা এনডিএ জোট নিয়ে নয়, নীতীশ কুমার এবং জেডিইউ-এর চিন্তা করা উচিত, লোকসভা নির্বাচনের পর তাঁদের দলটাই আর টিকবে কি না, তা নিয়ে।
প্রশান্ত কিশোর আরও জানিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে একমাত্র নীতীশ কুমারই জোটের নামের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তিনি আরও দাবি করেছেন, জেডিইউ-এর অনেক নেতার সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, তিনটি বৈঠকেই নীতীশ কুমার যা আশা করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। প্রশান্ত কিশোরের মতে, পটনায় জোটের প্রথম বৈঠকে নীতীশ কুমার আশা করেছিলেন তিনিই জোটের স্থপতি হিসেবে পরিচিতি পাবেন। তাঁকেই প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু, তা হয়নি। আশা করেছিলেন বেঙ্গালুরুতে তাঁকে সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সেখানে সমন্বয়কারী নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। মুম্বইয়ে তৃতীয় বৈঠকে নীতীশ কুমার চেয়েছিলেন, জাতিভিত্তিক আদমশুমারিকে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান অ্যাজেন্ডা করা হোক। কিন্তু, জোট তাঁর সেই পরামর্শ গ্রহণ করেনি।