চন্ডীগঢ়: রবিবার, পঞ্জাবের মানসা জেলায় এক গ্রামে, অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতীর গুলিতে নিহত হলেন জনপ্রিয় পঞ্জাবি গায়ক তথা কংগ্রেস নেতা সিধু মুসেওয়ালা (প্রকৃত নাম শুভদীপ সিং সিধু)। প্রসঙ্গত, শনিবারই রাজ্যের ৪২৪ জন ভিআইপি ব্যক্তির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল পঞ্জাবের আপ সরকার। ভিআইপি সংস্কৃতি দূর করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ বলে, জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান। এই ভিআইপি তালিকায় নাম ছিল সিধু মুসেওয়ালারও। তার পরদিনই দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারালেন তিনি। প্রসঙ্গত পঞ্জাবের গ্রামীণ এলাকায় দারুণ জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই থেমে গেল তাঁর পথ চলা।
জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেলে মানসারের জাওহারকে গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। সেই সময় তিনি একটি জিপগাড়িতে ছিলেন। গাড়িটিকে ঘিরে ধরে নির্বিচারে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রকাশিত ছবিতে গাড়িটির সামনের কাচে বেশ কিছু গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। সিধু মুসেওয়ালা ছাড়া আরও অন্তত দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের অবিলম্বে মানসার নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসকরা সিধুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, সিধু মুসেওয়ালার শরীরে একাধিক গুলি লেগেছিল। শনিবারই সিধুর নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল পঞ্জাব সরকার। এর আগে চারজন সশস্ত্র পুলিশ কর্মী ছিলেন সিধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে। শনিবার, তাদের মধ্যে দুজনকে সরিয়ে দেয় ভগবন্ত সিং মানের সরকার।
#WATCH | Punjabi singer Sidhu Moose Wala was shot by unknown people in Mansa district, Punjab. Further details awaited. pic.twitter.com/suuKT20hEj
— ANI (@ANI) May 29, 2022
গত বছর ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছিলেন সিধু মুসেওয়ালা। ২০২২ সালের পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন এই জনপ্রিয় গায়ক। মানসা আসন থেকেই লড়াই করেছিলেন তিনি। তবে, আম আদমি পার্টির বিজয় সিংলার কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। সিংলাকে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। দিন কয়েক আগেই তাঁকে দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তাঁকে গ্রেফতারও করে পঞ্জাব পুলিশ।
চলতি বছরের ১১ এপ্রিল ‘স্কেপগোট’ (বাংলা অনুবাদে বলির পাঁঠা) নামে একটি গান প্রকাশ করেছিলেন। ওই সঙ্গীতে তাঁকে বিধানসভা নির্বাচনে হার নিয়ে বিলাপ করতে শোনা গিয়েছিল। আম আদমি পার্টি অভিযোগ করেছিল, ওই সঙ্গীতে সিধু মুসেওয়ালা আপ দলকে জেতানোর কারণে পঞ্জাবের সাধারণ মানুষকে ‘গদ্দার’ বলেছেন। আপ আরও দাবি করেছিল, মুসেওয়ালার ওই গান কংগ্রেসের ‘পঞ্জাব-বিরোধী’ মানসিকতারই পরিচায়ক। এই নিয়ে তারা পঞ্জাব প্রদেশ কংগগ্রেসের নবনিযুক্ত সভাপতি অমরিন্দর সিং রাজা ওয়ারিংয়ের কাছে জবাব চেয়েছিল।
সিধু মুসেওয়ালার মৃত্যুর পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছেন, ‘প্রতিশ্রুতিমান কংগ্রেস নেতা এবং প্রতিভাবান শিল্পী সিধু মুসেওয়ালার হত্যায় গভীরভাবে মর্মাহত ও দুঃখিত। বিশ্বজুড়ে তার প্রিয়জন এবং ভক্তদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।’ কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা টুইট করে বলেছেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে সিধু মুসেওয়ালার খুনের ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। পঞ্জাবের এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা পঞ্জাবিরা একজন দুর্দান্ত জনসংযোগ থাকা প্রতিভাবান শিল্পীকে হারালো, যিনি মানুষের নাড়ি অনুভব করতে পারতেন। বিশ্বজুড়ে তার প্রিয়জন এবং ভক্তদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।’
শিরোমনি অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিং বাদলও, এই পঞ্জাবি গায়কের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। টুইট করে বাদল, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান-কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ‘কেন তাঁর অধীনে আইন-শৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে, নৈরাজ্যের দিকে চলেছে পঞ্জাব?’
অন্যদিকে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান টুইট করে বলেছেন, ‘সিধু মুসেওয়ালার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে আমি মর্মাহত এবং গভীরভাবে দুঃখিত। দোষীদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি পঞ্জাবের বাসিন্দাদের সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।